হাঁপানি বা ফুসফুসের সমস্যা থাকলে Mask পরবেন না। কারণ তাতে বিদ্যমান স্বাস্থ্যগত সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
হাঁপানি বা ফুসফুসের সমস্যা থাকলে সাধারণত শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হয়। এই ধরনের সমস্যায় ভোগা লোকজন মুখে মাস্ক পরে থাকলে উলটো নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ব্রিটিশ সরকার তাই এখন সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরার বদলে মুখে কাপড়ের আবরণ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে; তবে এক্ষেত্রে পরস্পরের থেকে অন্তত দুই মিটার (সাড়ে ছয় ফুট) দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
Corona Virus মূলত শ্বাসপ্রশ্বাস-সংক্রান্ত একটি ভাইরাস। মানুষের নিঃশ্বাসের সঙ্গে এই ভাইরাস ভেতরে প্রবেশ করে এক পর্যায়ে ফুসফুসে গিয়ে আক্রমণ করে। কিন্তু যাদের আগে থেকেই হাঁপানি রোগ কিংবা এই ধরনের কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা কিংবা সিস্টিক ফাইব্রোসিস জাতীয় জটিলতা রয়েছে তাদের সাধারণত ফেস মাস্ক পরার ফলে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা তৈরি হয়। কোনো কোনো সময় এই সমস্যাই তাদের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
এমনও হতে পারে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছাড়াই মাস্ক পরার জন্য কষ্ট করে নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়তে পারেন এরা। মাস্ক পরার কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যার কারণে অনেকের ভেতরে উদ্বেগ থেকেও খারাপ কিছু হতে পারে।
হাঁপানি বা ফুসফুসের সমস্যা থাকলে Mask পরবেন না
এর আগে গত মার্চে ব্রিটিশ লাং ফাউন্ডেশন বলেছিল, করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আমরা মাস্ক পরার সুপারিশ করি না। এগুলো যে খুব একটা কার্যকর তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এছাড়াও যাদের ফুসফুসের সমস্যা আছে তারা মুখে মাস্ক পরলে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কারা মাস্ক পরবেন?
তবে যাদের মাস্ক পরার কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত কোনো সমস্যা নেই তাদের জন্য মাস্ক পরার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। এতে করে তিনি এবং তার আশপাশের সবাই নিরাপদে থাকতে পারবে। এক সরকারি নির্দেশিকায় ব্রিটেনের ক্যাবিনেট অফিস বলছে, যদি আপনি এমন কোনো উন্মুক্ত জায়গায় যান, যেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব নয় এবং অনেক মানুষের সংস্পর্শে আসার আশঙ্কা রয়েছে সেখানে অবশ্যই খালি মুখে থাকা যাবে না। কোনো সুপারশপ কিংবা গণপরিবহনের মতো জায়গায় অবশ্যই মাস্ক পরা উচিত। কারণ এসব জায়গায় সেই অর্থে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হয় না।
অন্যদিকে যাদের হাঁপানির(Asthma) মতো সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে—নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হলে সেই ধরনের মাস্ক না পরাই উত্তম। কারণ তাতে বিদ্যমান স্বাস্থ্যগত সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
মাস্ক কিভাবে পরতে হয়?
পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড-এর ডঃ জেক ডানিং বলেন, “যদিও একটি ধারণা আছে যে মাস্ক ব্যাবহার করা উপকারী, কিন্তু বাস্তবে হাসপাতালের পরিবেশের বাইরে এই মাস্ক ব্যবহারের ব্যাপকভিত্তিক উপকার পাওয়ার খুব কম নজিরই আছে”।
তিনি আরো বলেন, মাস্ক যদি পরতেই হয় এবং এটা থেকে উপকার পেতে হয়, তবে সেটা পরতে হবে সঠিকভাবে। বদলাতে হবে নিয়মিত। এবং এগুলো যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না, এক্ষেত্রেও নিরাপত্তা নির্দেশিকা মানতে হবে।
ব্রিটিশ সরকার তার জনগণকে যাদের হাঁপানির মতো সমস্যা রয়েছে তাদের মাস্ক না পরে মুখে কাপড়ের আবরণ পরার পরামর্শ দিচ্ছে। তাদের প্রায় সাড়ে ছয় ফুট দূরত্ব মেনেই কাপড়ের আবরণ ব্যবহার করতে হবে। যদিও দুই বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে এই ধরনের কাপড়ের আবরণ ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে; কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এরা তা ঠিকমতো পরিচালনা করতে পারে না।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো চার্চিল বলেন, যখন বাইরে অনেক মানুষের মধ্যে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব নয়, সেখানে অবশ্যই ফেস মাস্ক পরা উচিত। কিন্তু যাদের হাঁপানির মতো সমস্যা রয়েছে তারা মাস্ক না পরে কাপড়ের আবরণ মুখে পরে বেশি দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারে।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সংক্রমণব্যাধি বিশেষজ্ঞ পুরভি পারিখও এমনটাই মনে করেন। তিনি বলেন, ফুসফুসের সমস্যা ছাড়াও যাদের মুখে এবং গলায় চর্মরোগ কিংবা স্মৃতিভ্রংশ (Alzheimer)সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত দীর্ঘ সময়ের জন্য মাস্ক পরা উচিত নয়। মুখ ও নাক একসঙ্গে ঢেকে থাকার কারণে দীর্ঘসময় মাস্ক পরে থাকায় তাদের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মুখের সঙ্গে আঁটোসাঁটোভাবে আটকে থাকা মাস্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই জাতীয় মাস্ক শুধু চিকিত্সকদের জন্যই জরুরি। এই ধরনের মাস্ক বেশিক্ষণ পরে থাকা কষ্টকর। এতে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে; বিশেষ করে যাদের হাঁপানি বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে।
Discover more from Health Bangla
Subscribe to get the latest posts sent to your email.