ক্রিকেট জগতে একটা কথা আছে – “খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত খেলা শেষ নয়।” সত্যি কথা বলতে, প্রতিটি আইসিসি টুর্নামেন্টেই এমন কিছু দল থাকে যারা কাগজে-কলমে দুর্বল হলেও মাঠে নেমে সবার চোখ ছানাবড়া করে দেয়। এবারের সিজনেও ব্যতিক্রম হবে না। দীর্ঘ ক্রিকেট পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, এমন কয়েকটি দল আছে যাদের উপর চোখ রাখা দরকার। অনলাইনে বাজি খেলার সাইট গুলোতে যারা নিয়মিত যান, বিশেষ করে MightyTips-এ ফিচার করা সাইটগুলোতে, তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে এই দলগুলোর অডস হঠাৎ করেই কমতে শুরু করেছে।
খেলাধুলার জগতে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ মাহদী কামাল মনে করেন, “আজকালকার ক্রিকেটে কোনো দলকেই অবহেলা করা যায় না। যেদিন মনে করবেন একটা দল দুর্বল, সেদিনই তারা আপনাকে চমকে দেবে।” আর সত্যিই তো, গত কয়েক বছরের দিকে তাকালে দেখা যায় – আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে, আফগানিস্তান ভারতকে কাঁদিয়েছে। MightyTips-এ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, https://mightytips.guide/baji/ এ বাজি সাইটটি বিশেষভাবে এই ধরনের আনপ্রেডিক্টেবল ম্যাচের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তবে এই লেখায় আমি শুধু তত্ত্বের কথা বলব না। বাস্তব পরিসংখ্যান, খেলোয়াড়দের ফর্ম, দলের গত পারফরমেন্স – সব মিলিয়ে একটা পরিষ্কার ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করব।
আফগানিস্তান – যাদের হাতে আছে জাদুর কাঠি
আফগানিস্তান নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই রশিদ খানের কথা মনে পড়ে। কিন্তু শুধু রশিদ খানই নন, পুরো দলটাই এখন একটা ভিন্ন লেভেলে পৌঁছেছে। ২০১৫ সালে যখন প্রথম তাদের খেলা দেখা হয়েছিল, তখন ভাবাই যেত না যে এতো দ্রুত তারা এগিয়ে যাবে।
তাদের বোলিং লাইনআপটা দেখলেই বোঝা যায় – রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, ফাজলহক ফারুকী। এই তিনজন মিলে যে কোনো ব্যাটিং লাইনআপকে তাল গুলিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাদের ইকোনমি রেট দেখলেই বুঝা যায় কতটা কার্যকর তারা।
স্থানীয় ক্রিকেট একাডেমিগুলোতে ছেলেরা নিবেদিত প্রাণ হয়ে খেলার চর্চা করছে। এই পরিশ্রমের ফলটাই এখন আন্তর্জাতিক মাঠে দেখা যাচ্ছে।
কেন আফগানিস্তান এবার আলাদা?
গত তিন বছরের পারফরমেন্স দেখলে একটা জিনিস পরিষ্কার – তারা ধৈর্য ধরে খেলতে শিখেছে। আগে হয়তো ব্যাটিং করার সময় তাড়াহুড়ো করতো। এখন সেটা নেই।
- সাউথ আফ্রিকা বিপক্ষে: ODI সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় (UAE তে)
- বাংলাদেশ বিপক্ষে: ODI সিরিজে ২-১ ব্যবধানে ঐতিহাসিক জয় (UAE তে)
- জিম্বাবুয়ে সিরিজ: T20I তে ২-১, ODI তে ২-০, এবং টেস্টে ১-০ জয়
- সামগ্রিক পারফরমেন্স: গত ছয় মাসে ৫টি বিলিটারাল সিরিজ জিতেছে
এই পরিসংখ্যানগুলো কিন্তু খালি সংখ্যা নয়। প্রতিটি জয়ের পিছনে আছে কঠোর পরিশ্রম আর দলগত প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশ – ঘরের সিংহ, বাইরেও বাঘ
বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে অনেকেরই মিশ্র অনুভূতি আছে। কখনো আকাশছোঁয়া আশা, কখনো গভীর হতাশা। কিন্তু সত্যি বলতে, গত দুই বছরে দলটার যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটা একদমই চোখে পড়ার মতো।
সাকিব আল হাসান এখনো দলের মেরুদণ্ড। তার অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু শুধু সাকিবের উপর নির্ভর করে থাকার দিন আর নেই। তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, নাহিদ রানা – এরা সবাই এখন আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে।
গত বছর ঢাকায় একটা ম্যাচ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ফিল্ডিংয়ের মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। এটা একটা বড় পরিবর্তন। কারণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিল্ডিংয়ের ভূমিকা অপরিসীম।
তাছাড়া বাজি খেলার সাইট গুলোতে যারা নিয়মিত যান, তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন বাংলাদেশের অডস কতটা ভালো আসছে। বিশেষ করে যখন তারা ঘরের মাঠে খেলে। বোর্ডের সাম্প্রতিক উদ্যোগও এই উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম
যারা ক্রিকেট ফলো করেন, তারা নিশ্চয়ই তাওহীদ হৃদয়, তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন, জাকের আলী, তানজিম সাকিব, রিশাদ হোসেন ও শামীম পাটোয়ারীদের নাম শুনেছেন। এই ছেলেরা এসেছে একদম নিচ থেকে। কোনো রকম তল্পিবাহক ছাড়াই শুধু নিজেদের মেধা আর পরিশ্রমের জোরে এই পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট দেখলেই বুঝবেন কতটা আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়। আর সোহান এবং লিটনের উইকেট কিপিং স্কিল চমৎকার!
স্কটল্যান্ড – ইউরোপের লুকানো রত্ন
স্কটল্যান্ড নিয়ে কথা বলতে গেলে একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে। ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে তাদের জয়টা দেখা হয়েছিল লাইভ টিভিতে। সে কী উত্তেজনা! কমেন্টেটররা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
ক্যালাম ম্যাকলিওড এবং জর্জ মুনসে – এই দুজনের নাম হয়তো অনেকেই জানেন না। কিন্তু যারা নিয়মিত কাউন্টি ক্রিকেট দেখেন, তারা জানেন এরা কতটা ক্ষমতাসম্পন্ন খেলোয়াড়।
স্কটিশ ক্রিকেটের একটা বিশেষত্ব আছে। তারা খুবই পরিকল্পিত খেলে। কোনো রকম তাড়াহুড়ো নেই। প্রতিটা বল, প্রতিটা রানের হিসাব তারা মাথায় রাখে।
স্কটল্যান্ডের শক্তিশালী দিকসমূহ:
- কাউন্টি ক্রিকেট এক্সপেরিয়েন্স: বেশিরভাগ খেলোয়াড় ইংল্যান্ডে নিয়মিত খেলে
- মেন্টাল স্ট্রেংথ: প্রেশার হ্যান্ডল করতে পারে
- টিম ইউনিটি: দলীয় ঐক্য খুবই শক্তিশালী
- ফিল্ডিং স্ট্যান্ডার্ড: আন্তর্জাতিক মানের
নেদারল্যান্ডস – নীরব বিপ্লব
নেদারল্যান্ডস সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই রায়ান টেন ডোশেটের কথা মনে পড়ে। এই ছেলেটা সত্যিই অসাধারণ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং – সব দিক দিয়েই কমপ্লিট প্লেয়ার।
ডাচদের ক্রিকেট দেখার একটা আলাদা মজা আছে। তারা খুবই বুদ্ধিমত্তার সাথে খেলে। কোনো রকম ইমোশনাল হয়ে পড়ে না। এটা তাদের ফুটবল কালচার থেকেই এসেছে বলে মনে হয়।
ম্যাক্স ও’ডাউড, কলিন অ্যাকারম্যান – এরা সবাই ইউরোপীয় ক্রিকেটে রেগুলার। তাদের টেকনিক আর টেম্পারামেন্ট দেখলে বোঝা যায় কতটা পরিণত খেলোয়াড়।

নেদারল্যান্ডসের সাম্প্রতিক অর্জন:
গত আঠারো মাসে নেদারল্যান্ডসের পারফরমেন্স:
- আগস্ট ২০২৩: মালয়েশিয়াকে ৩-০ সিরিজে হরিয়েছে
- অক্টোবর ২০২৩: নেপালের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়
- ডিসেম্বর ২০২৩: ওমানকে ২-১ সিরিজে হারিয়েছে
- ফেব্রুয়ারি ২০২৪: আয়ারল্যান্ডের সাথে ১-১ ড্র
পরিসংখ্যান যা চোখ খুলে দেয়
এখন আসুন কিছু বাস্তব পরিসংখ্যান দেখি। আইসিসির সর্বশেষ র্যাংকিংয়ে এই দলগুলোর অবস্থান:
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গত বছরের তুলনায় র্যাংকিং পরিবর্তন:
- আফগানিস্তান: ৯ম থেকে ১০ম (১ ধাপ অবনতি)
- বাংলাদেশ: ১০ম থেকে ৯ম (১ ধাপ উন্নতি)
- স্কটল্যান্ড: ১৫ম থেকে ১৪তম (১ ধাপ উন্নতি)
- নেদারল্যান্ডস: ১৮ম থেকে ১৩তম (৫ ধাপ উন্নতি)
এই সংখ্যাগুলো কিন্তু খালি পরিসংখ্যান নয়। এর পিছনে আছে কঠোর পরিশ্রম, পরিকল্পনা এবং দৃঢ় মানসিকতা।
কোচিং এবং প্রশিক্ষণের মান
এই দলগুলোর পিছনে যে কোচিং স্টাফ আছেন, তারা সবাই অভিজ্ঞ। আফগানিস্তানের কোচিং স্টাফে আছেন জোনাথন ট্রট। বাংলাদেশে আছেন ফিল সিমন্স। এরা সবাই আন্তর্জাতিক লেভেলে খেলেছেন, বুঝেন কীভাবে বড় টুর্নামেন্টে পারফর্ম করতে হয়।
ফ্যান সাপোর্ট এবং মোরাল
ক্রিকেটে ফ্যান সাপোর্টের গুরুত্ব অসীম। আফগানিস্তানের ফ্যানরা যেভাবে তাদের দলকে সাপোর্ট করে, সেটা দেখলে গায়ে কাঁটা দেয়। বাংলাদেশের ফ্যানদের তো কথাই নেই। তারা যেখানেই খেলুক, সেখানেই বাংলাদেশী পতাকা দেখা যায়।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিশ্লেষকদের ব্যক্তিগত মতে, এই চার দলের মধ্যে অন্তত দুটি দল এবারের আইসিসি টুর্নামেন্টে কোয়ার্টার ফাইনাল অতিক্রম করবে। হতে পারে একটি সেমিফাইনাল পর্যন্তও পৌঁছাবে।
প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, “আধুনিক ক্রিকেটে আর কোনো ‘মিনোস’ নেই। প্রতিটি দলই বিপজ্জনক।” আর এই কথাটা একদম সত্যি।
উপসংহার
শেষ কথায় বলতে হয়, ক্রিকেট একটা অনিশ্চিত খেলা। কাগজে-কলমে যতই শক্তিশালী দল থাকুক, মাঠে যেদিন মুখোমুখি হবে সেদিন যে কেউ জিততে পারে। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ড আর নেদারল্যান্ডস – এই চার দলই এই সিজনে বিশেষ নজরে রাখার মতো। বিশেষজ্ঞ মাহদী কামালের সাথে একমত হয়ে বলা যায় – এদের কোনো একটি দল নিশ্চয়ই সবাইকে চমকে দেবে।
বেটিং এক্সপার্টরাও এই দলগুলোকে যথেষ্ট সিরিয়াসলি নিচ্ছেন। আর দর্শকরা? তারা শুধু অপেক্ষায় থাকবেন কোন দল কবে সবার চোখ ছানাবড়া করে দেয়। ক্রিকেট তো এমনই – যেদিন ভাবা হয় সব জানা, সেদিনই নতুন কিছু ঘটে যায়!
Discover more from Health Bangla
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
