মেনোপজের ক্ল্যাসিক্যাল সংজ্ঞাটি হলো- যৌন জীবনের ইতি এবং সুস্থ্য-সবল জীবযাপনে সংগ্রামের শুরু, যা নারীর কাছে গর্ভধারণে সক্ষমতা হারানোর বার্তা; এক রক্তিমপত্র।
নারীদের মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিলেন এক বিজ্ঞানী। পুরুষের অপেক্ষাকৃত কম বয়েসী নারীর প্রতি আসক্তিই মেয়েদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার আসল কারণ বলে গবেষণায় দেখিয়েছেন কানাডার অন্টারিওর ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান বিভাগের গবেষক ড. রমা সিং।
মেয়েদের প্রতি পুরুষের আসক্তিই নারীদের ঋতুস্রাব বন্ধ কারণ
সম্প্রতি পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সের (PLOS) কম্পিউটেশনাল বায়োলজি জার্নালে এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে। ড. রমা সিং এক বিবৃতিতে তাঁর গবেষণা সংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। কম্পিউটেশনাল বায়োলজির ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা এক ধরনের কম্পিউটার সিমুলেশন তৈরি করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে দেখানো হয়, কিভাবে একজন পুরুষের বিতৃষ্ণা তার সঙ্গিনীর ঋতুস্রাব ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়।
ড. সিং বলেন, মেনোপজ নারীর এক বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু কেউ-ই এর কারণের সন্তুষ্টিমূলক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার মূল তত্ত্বে বলা হয়, যে নারীদের সন্তানের জন্ম দিয়ে তাদের দেখভাল করার মতো বয়স পেরিয়ে গেছে, তাদের গর্ভধারণে এক প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা মেনোপজ। একই ধরনের আরেক তত্ত্বে বলা হয়, এটা ‘দাদি বা নানি’ ঘটিত প্রভাব। অর্থাৎ বয়স্ক নারীরা তাদের অনুজ প্রজন্মকে লালন-পালন করতে অক্ষম। তাই পরের প্রজন্মকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে মেনোপজ দেখা দেয়।
তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবাদের বিশেষজ্ঞ ড. ম্যাক্সওয়েল বার্টন-চেলো ভিন্ন মত পোষণ করে জানালেন, এ গবেষণায় বলা হচ্ছে- একজন নারীর প্রতি তার সঙ্গীয় পুরুষের আসক্তির লোপই মেনোপজের কারণ। তবে এর উল্টোটাই হয়তো সত্যি। অর্থাৎ বয়সের কারণে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই পুরুষরা ওই নারীর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কম বয়েসী নারীর প্রতি পুরুষরা আসক্ত হয়, কারণ যুবতী মেয়েরা বেশি উৎপাদনক্ষম। কিন্তু এই নতুন গবেষণায় যুবতীদের প্রতি পুরুষের আসক্তির কোনো কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। মূলত ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্বটি হলো- এটি নারীদের এক জৈবিক বিবর্তন। কারো মেনোপজ হওয়া মানে হলো- এই নারীর আর বংশবিস্তারের প্রয়োজন নেই।
ঋতুস্রাব
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, ঋতুস্রাবের ধারাবাহিক ১২ মাসের একটি সময় মেনোপজ, যার মাধ্যমে নারীদের গর্ভধারণের অক্ষমতা প্রকাশ পায়।
ড. সিং জানালেন, দেখা গেছে, ঋতু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও বহু নারী চমৎকার যৌনজীবন উপভোগ করছেন। মেনোপজের পর সুস্থ্য জীবনের জন্য নানা সফল গবেষণা হয়েছে। এক সময় ঋতু বন্ধের পর নারীদের ক্যান্সার ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু বর্তমানে হরমোন ও পুষ্টি উপাদান থেরাপি প্রয়োগ করে নারীদের নিশ্চিত সুস্থ্য জীবন ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে মেনোপজের কয়েকটি বাজে লক্ষণ হলো- ঘুমে বেঘাত, দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, দুর্বলতা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা এবং এমনকি জ্ঞান হারানো।
তবে সবার শেষে ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসের নৃবিজ্ঞানী লিনিটে লেইডি সিভার্ত বললেন, নতুন এই হাইপোথিসিস গ্রহণযোগ্য নয়। মেনোপজ ঘটার কারণ লুকিয়ে আছে মানুষ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর উদ্ভবগত ও জন্মগত বৈশিষ্ট্যের অপার রহস্যের মধ্যে।
কাজেই সিভার্তের মতে, নারীদের কেন ঋতুস্রাব বন্ধ হয়?– এই চির রহস্যময় প্রশ্নটির উত্তর ড. রমা সিংয়ের ব্যাখ্যা দেয় না এবং শেষ পর্যন্ত তা এখনো অজানাই রয়ে গেছে। সূত্র : ফক্স নিউজ, প্লস কম্পিউটেশনাল বায়োলজি
Discover more from Health Bangla
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
Thanks for your helps