বাড়তি চর্বি

শরীরের বাড়তি চর্বি বের করবেন?

আমরা দেহে চর্বি বাড়তি হলে ঝরাতে চাই, তবে এজন্য দেহে চর্বি থাকবেনা পরিমিত, তাতো নয়। চর্বি বেশ প্রয়োজনীয়, জানেন তো। চর্বির দুটো কাজ তো আছেই। যেমন-

বাড়তি চর্বি
বাড়তি চর্বি

১. শরীরের বাড়তি ক্যালোরি, চর্বি রাখে ভান্ডারে নিরাপদে। যাতে ক্ষুধার্ত হলে, অনাহারে থাকলে শরীর শক্তি সংগ্রহ করতে পারে সেই ভান্ডার থেকে।

২. চর্বি নি:সৃত করে নানান হরমোন যা নিয়ন্ত্রণ করে দেহের বিপাককে।

শরীরে অতিরিক্ত চর্বি থাকা ঠিক নয় সত্যি, তবে এটি পুরুষের মধ্যে স্ত্রী হরমোন বাড়ায় এ বড় মিথ্যে কথা। সত্যি কথা হলো স্থূল রমনীদের দেহে পু:হরমোন একটু বেশি আছে, আর তাই এদের হূদরোগের ঝুঁকি বেশি। এই হরমোনের জন্য এদের মাথায় কেশ বিরল হয় পুরুষদের মতো। ব্রুন ও মুখে লোম। স্থূল লোকদের ঘুমে শ্বাস রোধ হয়, বোবায় ধরে যাকে চিকিত্সা বিজ্ঞানে বলে ‘স্লিপ এপিনয়া’। ঘুমে এমন বারবার শ্বাস রোধ হলে বিপদও হতে পারে, দেহে অক্সিজেন মান নেমে আসে, প্রভাব ফেলে হূদযন্ত্রের উপর, বেড়ে যায় হার্ট এটাকের ঝুঁকি। ঝুকি বাড়ে স্ট্রোক ও ডায়াবেটিসেরও। কিন্তু তবু দেহে কিছু মেদ চাই, শক্তির ভান্ডার হিসেবে, তাপরোধক হিসেবে, শরীরে অভিঘাত সহার জন্য, আর দেহের নন্দনকান্তি, সুন্দর কান্ডির জন্য মেদতো চাই চাই।

মোটদেহ মেদের বাড়তি হলে স্থূলতা। তবে কথা আছে, শরীরের স্বাভাবিক ওজনের ২০% বেশি হলে তবে তাকে স্থূল বলা যায়। স্থূলতার সচরাচর পরিমাপ হলো বড়ি মাস ইনডেক্স বা বি.এম.আই। কারো বিএমআই ২৫-২৯.৯ এর মধ্যে হলে তাকে বলা যাবে বেশি ওজন। কারো বিএমআই ৩০ বা এর বেশি হলে স্থূল। যত কিলো শরীরের ওজন, একে যতটুকু লম্বা তা মিটারে মেপে এর বর্গফল দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যাবে বিএমআই।

একগ্রাম চর্বি থেকে পাওয়া যাবে ৯ ক্যালোরি। শরীরের আয়তন ও কাজ কর্ম বা শরীর চর্চা অনুযায়ী দৈনিক ক্যালোরি চাহিদা নিরূপন করা হয়। যার দিনে ২০০০ ক্যালোরি চাহিদা, তার দিনে গড়ে ৬৫ গ্রামের বেশি চর্বি খাওয়া ঠিক নয়।

কি করে বের করবেন

১. প্রতিদিন কত ক্যালোরি গ্রহণ করবেন এবং একে ৩০% শতাংশ দিয়ে গুণ করুন। (০.৩০) যেমন ২০০০ ক্যালোরি x = ৬০০ ক্যালোরি, চর্বি থেকে।

mastercard

২. উত্তর ফলকে ৯ দিয়ে ভাগ করুন। কারণ প্রতি গ্রাম চর্বিতে রয়েছে ৯ ক্যালোরি। এতে বের হবে দৈনিক চর্বি গ্রহণের সীমা ৬০০ ভাগ ৯ = ৬৫ গ্রাম। তাই প্রতিদিন যিনি ২০০০ ক্যালোরি গ্রহণ করেন, তার ৬৫ গ্রামের বেশি চর্বি গ্রহণ করা ঠিক নয়। অনেকে বলেন এত চর্বি গ্রহণও ঠিক নয়। এটিও অতিরিক্ত, মন্তব্য অনেকের। তলপেটে মেদ বড়ই বিপজ্জনক। উরুতে বা নিতম্বে চর্বি হওয়া থেকে অনেক বিপজ্জনক। ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের উপর এর প্রভাব ক্ষতিকর। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশ বাড়ে, রক্তের চর্বি মানের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে, উসকে দেয় হূদযন্ত্র ও স্ট্রোকের ঝুঁকি। তলপেটে মেদ মানে আপেল আকৃতি শরীর। হূদরোগ, মেটাবলিক সিনড্রোম ও ডায়অবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। কোমরের পরিধি যত বেশি, হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি তত বেশি। হার্ট ফেরিওর হলে হূদযন্ত্র যথেষ্ট রক্ত পাম্প করতে পারেনা এবং তরল জমা হয় ফুসফুসে বা জমা হয় পা ও পায়ের পাতায়।

ব্রাউন ফ্যাট মানে শিশু ফ্যাট

ব্রাউন এডিপোজ টিস্যু (ব্রাউন ফ্যাট) হলো শিশুদের জন্য এলার্জির দ্রুত উত্স এবং তা দেহের ওজনের ৫%। এটি বাদামী চর্বি, কারণ মেদকোষগুলো সাইটোকনড্রিয়ার ভর্তি, সাইটোকনড্রিয়া হলো এনার্জির কারখানা এবং রক্ত সরবরাহ খুব বেশি। ব্রাইন ফ্যাট বড় হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

নারীদের দেহের ওজনের স্বাভাবিক ২৫-৩০ % হলো চর্বি, পুরুষদের ১৮-২৩%। ৩০% এর বেশিদেহের চর্বি নারীদের হলে এবং ২৩% এর বেশি পুরুষদের হলে স্থূল বলা যেতে পারে। এক পাউন্ড চর্বিতে কত ক্যালোরি? ৩৫০০ ক্যালোরি।

১ পাউন্ড শরীর থেকে হারাতে ৩৫০০ ক্যালোরি পুড়াতে হয়।

দিনে ৫০০ পাউন্ড করে পোড়ালে ৭ দিন সময় লাগবে। বা ১০০০ ক্যালোরি প্রতিদিন সপ্তাহে ২ পাউন্ড হারাতে হলে। ওজন হরাসের নিরাপদ সীমা হলে প্রতি সপ্তায় ১-২ পাউন্ড। তাই কম ক্যালোরি গ্রহণ এবং ব্যায়াম করে ক্যালোরি পোড়ানো এই হলো কৌশল। বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, সুস্থত্বক ও চুলকে বজায় রাখে চর্বি। চর্বি শরীর থেকে ভিটামিন এ, ডি, ই, কে এই চারটি ভিটামিন রক্তস্রোতে শোষিত হতে সাহায্য করে। স্থূল হলে বিপদ। স্থূল হওয়া মানে শরীরে এত চর্বি জমা হয় যে স্বাস্থ্য পড়ে বিপদে। স্থূল হলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচুমান কোলেস্টেরল, উচুমান চর্বি বা ট্রাইগ্লিসারাইড, করোনারী ধমনী রোগ, স্ট্রোক, স্লিপ এপনিয়া এসব রোগের ঝুঁকি। ওজন হরাস হলে এসব রোগের ঝুঁকি অনেক কমে। শরীরে কোথায় চর্বি জমেছে তা কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চর্বি যদি বেশিরভাগ জমে পেটে, আপেল আকৃতি অবয়ব যদি হয় তাহলে খুব বড় ঝুঁকি থাকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচুমান কোলেস্টেরল, করোনারী ধমনী রোগের অন্তত: যাদের নিতম্বে চর্বি তাদের চেয়ে অনেক বেশি। যারা ক্ষীনদেহ বা নাসপাতি আকৃতি তাদের চেয়ে অনেক বেশিতো বটেই। রক্তে চর্বি খুব বেশি হলে আমরা একে চিকিত্সার ভাষায় বলি হাইপারলিপিডেমিয়া। অনেক সময় উচুমান কোলেস্টেরল হয় পারিবারিক ধাতে, যাকে বলে ফেমিলিয়ান হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া। এদের অনেক ছোট বেলায় হূদরোগ ও পরে হার্ট এ্যাটাক হয়। হাইড্রোজিনেটেড ফ্যাট ও আংশিক হাইড্রোজিনেটেড ফ্যাট বলে কথা আছে। হাইড্রোজিনেশন প্রক্রিয়ার সময় উদ্ভিজতেলে যোগ করা হয় হাইড্রোজেন। হাইড্রোজিনেশন করলে তরল চর্বি যেমন উদ্ভিজ্জ তেলে পরিণত হয় অর্ধকঠিন (শক্ত), অনেক দিন শেলফে থাকার মত চর্বি হয়ে যায় যেমন মার্জারিন। বেশিরভাগ তেলকে আংশিক হাইড্রোজিনেশন করা হয়। তৈরি হয় ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাট। যা বেশি খেলে ক্রমে রক্তে বাড়ে কোলেস্টেরল। খাদ্য প্রস্তুত কারীরা উদ্ভিজ্জতেলে হাইড্রোজেন কেন যোগ করেন। খাদ্যের উম্মুক্ততাকে থাকার স্থিতিকাল বাড়ানো এবং এর ফ্লেভার অক্ষুন্ন রাখার জন্য। যাতে দীর্ঘকালের খাদ্যের অন্তর্গত সুবাস অক্ষুন্ন থাকে। প্রক্রিয়াজাত খাবার হিসেবে আংশিক হাইড্রোজিনেটেড তেল অনেক জনপ্রিয় কারণ এটি সস্তা, স্থিলিশীল ও অবাধে প্রাপ্তি সাধ্য।

বলছিলাম দেহ বিপাক সম্বন্ধে। নানান হরমোন ও এনযাইম মিলে মিশে খাবারকে জ্বালানিতে রূপান্তরিত করে। আমাদের দেহের জটিলসব প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়ার জাল সবইতো বিপাকের অন্তর্গত। এই বিপাকের ফলে কখনও দেহে তৈরি হয় নানা বস্তু বা কখনও যায় ভেঙ্গে। নির্গত হয় শক্তি, যা প্রয়োজন শরীরের কাজের জন্য। শরীরে ওজন যত বেশি, সম্ভবত বিপাকও চলছে দ্রুত গতিতে। অবাক হবার কথা। শরীর যত বেশি ওজন বহন করে, বিপাকও চলে তত দ্রুত। সহজ কথাটি হলো বাড়তি ওজনটি শরীরকে আরও কঠোর কাজ করতে প্রবৃত্ত করে যাতে বিশ্রামের সময় শরীর বজায় থাকে, চলে উদ্যমে। তাই বিপাক চলে দ্রুততর-বলেন লাইফস্টাইল বিশেষজ্ঞ মলি কিমব্ল। তাই খাদ্য বিধি পরিবর্তনের শুরুতে ওজন হারানো সহজ পরে তা হয় বেশ কঠিন। খুব বেশি ভারি ওজনের হলে, বিপাক এত দ্রুত চলে যে সামান্য ক্যালোরি কমালেও বেশ সুফল পাওয়া যায়।

Leave a Reply

error: Content is protected !!