Corona Virus

করোনা হয়েছিল কি হয়নি বুঝবেন কিভাবে?

আমাদের কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন, যে কিভাবে বুঝব আমার করোনা হয়েছিল কিনা? এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই আজকের এই পোস্ট দেয়া।

করোনা সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গসমূহ

  • জ্বর
  • শুকনো কাশি
  • ক্লান্তিভাব
 

কম সাধারণ উপসর্গসমূহ:

  • ব্যথা ও যন্ত্রণা
  • গলা ব্যথা
  • ডায়রিয়া
  • কনজাংটিভাইটিস
  • মাথা ব্যথা
  • স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া
  • ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা বা আঙুল বা পায়ের পাতা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া

সরকার প্রতিদিনের যে হিসেব দিচ্ছে তাতে ঢাকায় শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ হাজার। কিন্তু সরকারের একটি বিভাগ একটি জরিপ করে যে হিসেব দিচ্ছে, তাতে ঢাকার সংক্রমিতের সংখ্যা বহু বহু গুন বেশি। ঢাকার জনসংখ্যা বিবেচনায় এনে হিসেব করলে ১৬ লাখের কম হবে না।

জরিপে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার ৯% লোকই করোনাভাইরাস সংক্রমিত, তবে বস্তি এলাকায় সংক্রমণের হার কম, ৬%।

চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে মরণ ভাইরাস করোনা। এই ভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট। এই ভাইরাসের হানায় যেকোনো মানুষের শরীরের অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। তবে কিছু কিছু মানুষের শরীরে এই ভাইরাস বাসা বাঁধলেও কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, করোনা কিছু কিছু মানুষের শরীরে গোপনে আক্রমণ করে আবার গোপনেই চলে যায়। তবে আপনি কয়েকটি লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন, কোনো সময় করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না। ইয়াহু নিউজের এক প্রতিবেদনে এমন কয়েকটি লক্ষণের কথা বলা হয়েছে।

গোপনে করোনা এসে চলে গেল? বুঝতে পারবেন এই লক্ষণগুলোতে

‘বেড কোল্ড’র আক্রমণ

বেড কোল্ড

করোনার শুরুতে আপনি যদি ঠাণ্ডা বা সর্দিতে আক্রান্ত হন; তাহলে আপনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। করোনার আর সাধারণ সর্দির মধ্যে পার্থক্য খুবই কম। তবে এগুলোর সঙ্গে যদি জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, পেশি বা শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, স্বাদ বা গন্ধের ক্ষতি, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া থাকে, তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।

গন্ধ বা স্বাদ অনুভূতি হারানো

গন্ধ বা স্বাদ অনুভূতি হারানো

গন্ধ, স্বাদ হারিয়ে ফেলা বা কমে যাওয়া করোনার একটি বড় লক্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এই লক্ষণটি সবার ক্ষেত্রে ঘটে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ড. অ্যাডালজা জানিয়েছেন, স্বাদ হারিয়ে ফেলা করোনার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত।

আমেরিকান একাডেমি অব ওটোলারিঙ্গোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারির প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে যে, করোনা রোগীদের গন্ধ অনুভূতি হারাতে থাকা ২৭ শতাংশ রোগীর প্রায় সাত দিনের মধ্যে ‘কিছুটা উন্নতি’ হয়েছিল, তবে বেশির ভাগের মধ্যেই ভালো হয়ে যায় ১০ দিনের মধ্যে।

শীত, ফ্লু, সাইনাস ইনফেকশন বা মৌসুমি অ্যালার্জির মতো শ্বাস-প্রশ্বাসের অন্যান্য রোগেও অস্থায়ীভাবে গন্ধ বা স্বাদের অনুভূতি হারিয়ে ফেলতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লক্ষণটি কিছু লোকের মধ্যে দীর্ঘদিন থাকতে পারে। করোনামুক্তির পর কয়েক মাসও এটি থাকতে পারে।

চুল পড়ে যাওয়া

করোনার থাবা থেকে মুক্ত হওয়ার পর অনেকেরই চুল পড়ে যায় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। করোনাজয়ী অনেকেই এমন তথ্য জানিয়েছেন। করোনা জয়ের পর অস্বাভাবিকভাবে বেশি চুল পড়তে পারে। অভিনেত্রী অ্যালিসা মিলানো কয়েক মাস ধরে করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন। আগস্টের গোড়ার দিকে নিজের একটি ভিডিওতে চুল পড়ে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।

এটি টেলোজেন এফ্লুভিয়াম হিসেবে পরিচিত এক অবস্থার জন্য চুল পড়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থা, চরম মানসিক চাপ, ওজন হ্রাস, করোনাসহ অনেকগুলো কারণেই চুল পড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন চিকিৎসক ডা. অ্যাডালজা।

মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট অনুভব

জ্যামা (জেএএমএ) জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, করোনামুক্ত মানুষদের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ ভাইরাসের প্রভাব থাকতে পারে। এটি কত দিন স্থায়ী হতে পারে তা পরিষ্কারভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এটি ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের কারণে ঘটে। মার্কিন চিকিৎসক ডা. শ্যাফনার বলেছেন, আপনার যদি এমনটা হয়, তবে ভালো। সম্ভবত আগে আপনি যে অসুস্থতার অভিজ্ঞতা পেয়েছিলেন, তা ছিল করোনার। এ রকম হলে তিনি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

কাশি আছে; কিন্তু যাচ্ছে না

করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর কাশিও থেকে যেতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কাশিও গোপনে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়ার লক্ষণ। জ্যামা স্টাডিতে অংশ নিয়েছে এমন লোকেরা এই তথ্য জানিয়েছে। ড. অ্যাডালজা বলেছেন, কাশি প্রায়শই শুষ্ক থাকে, যার অর্থ কফ বা শ্লেষ্মার মতো কিছুই আসে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি জানিয়েছে, করোনামুক্ত হয়ে যাওয়ার পর ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত কাশি থেকে যেতে পারে। সুস্থ হয়ে যাওয়া ৪৩ শতাংশ মানুষের এমন হয়েছিল।

আপনি সত্যি সত্যিই ক্লান্ত

জ্যামা স্টাডি অনুসারে, কোনো ব্যক্তির করোনা হওয়ার পরে এটি সবচেয়ে বড় স্থায়ী প্রভাবগুলোর মধ্যে একটি। এই সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৫৩ শতাংশ রোগী জানিয়েছেন, প্রথমবার ভাইরাসের লক্ষণগুলো দেখানোর প্রায় ৬০ দিন পর পর্যন্ত ক্লান্তি থেকে যায়।

ড. অ্যাডালজা বলেছেন, আমরা এমন কিছু মানুষকে দেখেছি, যাদের হালকা অসুস্থতা ছিল। কিন্তু অনেক সময়ের জন্য ক্লান্তি ছিল। তবে এমনটা কেন হচ্ছে, সেই বিষয়ে পুরোপুরিভাবে কিছুই জানা যাচ্ছে না।

মনে রাখবেন, ক্লান্তি আসলেই একটি সাধারণ সমস্যা। অনেকগুলো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে এটি (অবশ্যই পর্যাপ্ত ঘুম না পাওয়াসহ)। চুল পড়ার মতো, যেসব মানুষ করোনার কারণে ক্লান্তি অনুভব করে, তাদেরও অতীতে ভাইরাসের অন্যান্য লক্ষণ দেখা যেত বলে জানিয়েছেন ড. অ্যাডালজা।

কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ

করোনা থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ সারা জীবন থেকে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেছেন যে করোনা এখনো একটি নতুন ভাইরাস। চিকিৎসকরা এবং বিজ্ঞানীরা সর্বদা এটি সম্পর্কে আরো জানছেন। ডা. অ্যাডালজা বলেছেন, ভাইরাসের স্থায়ী প্রভাব নিয়ে গবেষণা চলছে।

এটি উল্লেখ করার মতো বিষয়, ভাইরাস সংক্রমণের পরে কিছু মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। জ্যামা কার্ডিওলজিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধের বরাত দিয়ে হেল্‌থ বাংলা বলছে, করোনামুক্ত ১০০ জনকে নিয়ে একটি ছোট্ট গবেষণা করা হয়। এ সময় প্রাক্তন রোগীদের ওপর এমআরআই করা হয়েছিল। তখন দেখা গেছে, ৭৮ শতাংশ মানুষের কোনো ধরনের অস্বাভাবিক হৃদরোগ ছিল না। অথবা পূর্বে যা ছিল, তার চেয়েও আলাদা। ডা. শ্যাফনার বলেছেন, করোনামুক্তির পর এলোমেলো হার্টের ধড়ফড়ানিসহ বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অবশ্যই এমন আরো অনেক জটিলতা রয়েছে, যা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা এখনো জানেন না। যদি মনে হয়, আপনার করোনা আছে, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা বলেছেন ডা. শ্যাফনার।


Discover more from Health Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Health Bangla
error: Content is protected !!