pumping breastmilk

বুকের দুধ না থাকলে কিভাবে পাম্প করবেন

বুকের দুধ শিশুকে কিভাবে খাওয়াবেন? প্রথম আঠালো দুধ আসলে কী?

সন্তানের জন্যে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। ফর্মুলা ফিডিং করে আর যাই হোক, শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। আমরা সবাই জানি মায়ের দুধের উপকারিতা। কিন্তু আসলে কত উপকারী তা কি জানি ? আর প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়ের স্তনে নানা পরিবর্তন হতে পারে সেক্ষেত্রেই বা করনীয় কী? সন্তান জন্মের আগে থেকেই মায়ের স্তনে দুধ জমতে থাকে এবং শিশু জন্ম দানের পর কলোস্ট্রাম বা শালদুধ নিঃসৃত হয় যা একটি শিশুর জন্যে প্রথম টিকা স্বরূপ।
 
pumping breastmilk
 
শালদুধ কী ?
জন্মের পর হলুদ , আঠালো যে দুধ নিঃসৃত হয় তাই শালদুধ।  শালদুধ কত উপকারী এক নজরে দেখে নিই।
  • এটি বাচ্চার প্রথম খাবার যা পরবর্তী কালীন দুধ থেকেও অধিক প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ।
  • সঠিক সময়ের আগেই জন্ম হওয়া শিশুদের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় একটি খাবার যাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি আছে।
  • এটি বাচ্চার পায়খানা সহজ হতে সাহায্য করে।
  • এতে প্রচুর ইমিউনো গ্লোবিউলিন আছে ( Ig A বেশি ) যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
শালদুধের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তাই কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। সন্তান জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গেই মার কাছে দিয়ে দিতে হবে যাতে মা তাকে দুধ খাওয়াতে পারে। অনেকে ভুল করে বাচ্চার মুখে মধু বা পানি দেয় যা একেবারেই উচিত নয়।
প্রথম ছয় মাসে মায়ের দুধ ছাড়া এক ফোঁটা পানিও দেয়া যাবে না।
একে বলে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং (Exclusive Breast Feeding)
 
যদি দেখেন বাচ্চা ঠিক মত দুধ পাচ্ছে না তবে বিকল্প উপায়ে হলেও মায়ের বুকের দুধ এক্সপ্রেস করে খাওয়াতে হবে। কোনো কারণে মা অসুস্থ হলে, নিপল ভিতরের দিকে ঢুকে থাকলে বা বাচ্চা ঠিক মত চুষতে পারছে না এমন হলে হাত, সিরিঞ্জ ( সুঁই দিয়ে না, সুঁই ফেলে সিরিঞ্জের আগার অংশ গোল করে কেটে বোঁটায় বসিয়ে প্রিস্টন দিয়ে টানতে হবে ) , চামচ , কাপ বা বোতলের সাহায্যে বুকের দুধ টেনে বাচ্চাকে খাওয়ানো যাবে।
 
দেখে নিন বুকের দুধ না থাকলে কিভাবে পাম্প করবেন
 
এখন প্রশ্ন আসতে পারে এতে কি দুধের পুষ্টিগুণ নষ্ট হবে? না, পরিষ্কার হাত বা পাম্পের মাধ্যমে ( ইলেকট্রিক বা উপরোক্ত জিনিস গুলো পাম্পের মত ব্যবহার করে ) কাজটি করলে বাচ্চার কোনো সমস্যা হবে না। আবার অনেক সময় অতিরিক্ত দুধ জমা হলে মায়ের স্তন ব্যথা হতে পারে। তখন বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর দরকার না হলে পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে চিপে নিয়ে স্তনে দিয়ে ম্যাসেজ করে দুধ চিপে ফেলে দিতে হবে।
 
প্রসব পরবর্তী সময়ের দুই তিন দিনের মধ্যে অনেক সময় স্তনে ব্যথা হয়। অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রথম বারের মত স্তনে দুধ তৈরি হওয়ায় অনেক মায়ের স্তনই খুব সেন্সেটিভ হয়ে যায়। দুধ যাতে বেশি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক বেশি জমে থাকলে স্তনে ইনফেকশন বা এবসেস ( পুঁজ জমা ) হতে পারে। প্রসব পরবর্তী সময়ে জ্বর আসা ভালো লক্ষণ নয়। এদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

এখন জেনে নিন মায়ের দুধের উপকারিতাঃ

শিশুর জন্য উপকারিতা –
১। ইনফেকশনের হাত থেকে বাঁচায়
২। সহজে হজম ও শোষিত হয়
৩। বাচ্চার মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে
৪। বাচ্চাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
৫। মায়ের সঙ্গে আত্মিক বন্ধন গঠন করে
৬। এটি সন্তানের জন্যে একটি সম্পূর্ণ খাবার
৭। বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে
 
মায়ের জন্য উপকারিতা –
১। মায়ের জরায়ু সঠিক অবস্থানে ফিরে আসায় স্তন পান করানোর গুরুত্ব অনেক
২। পরবর্তী গর্ভধারণ প্রলম্বিত করে , ফলে অনেকটা জন্মবিরতিকরণ পিলের ন্যায় কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৭০  ভাগ মায়ের বাচ্চাকে দুধ পান করানো পর্যন্ত ঋতুস্রাব হয় না যদি বাচ্চা এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং এ থাকে। কারণ প্রোল্যাক্টিন হরমোন এতে পরোক্ষ ভাবে বাধা দেয়।
৩। মায়ের স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যান্সারে বাঁধা দেয়।
 
সঠিক পজিশন ও এটাচমেন্ট
 
মা ও সন্তানের , উভয়ের সুস্থতার জন্যেই প্রয়োজন সঠিক উপায়ে দুধ পান করানো। বাচ্চাকে সঠিক পজিশনে ধরতে হবে। বাচ্চার পুরো শরীর হাত দিয়ে তুলে ধরে দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চা মায়ের বুকে লেগে থাকবে , মাথা ও শরীর সোজা থাকবে। নাক থাকবে মায়ের নিপল বরাবর। থুতনি মায়ের স্তনে ছুঁয়ে থাকবে। মুখ সম্পূর্ণ হা করে নিচের ঠোঁট বাইরের দিকে উল্টে রেখে খাওয়াতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে মায়ের বোঁটার চারপাশের কালো অংশের উপরিভাগই যেন বেশি দেখা যায়, নিচের ভাগ নয়।
 
সন্তান জন্মের ছয় মাসের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দিতে হবে , একে কমপ্লিমেন্টারি ফিডিং (Complementary Feeding) বলে। এই খাবার হতে হবে পরিষ্কার ও নিরাপদ। সহজলভ্য ও সাধ্যের মধ্যে। শক্তি বর্ধক ( ভাত , রুটি , তেল , আলু ) , দেহ বৃদ্ধিকারী ( মাছ, মাংস , দুধ , ডিম , ডাল ) , ফল , শাকসবজি নরম করে খেতে দিতে হবে। তৃতীয় বছর থেকে বাচ্চা পরিবারের অন্যান্য দের মত নরমাল খাবার খেতে পারবে।
সন্তান অমূল্য সম্পদ। সব মা বাবাই চেষ্টা করেন সঠিক ভাবেই পালন করতে। জানার অভাবে যেন ভুল না হয় তাই এই ক্ষুদ্র  প্রয়াস।  ভালো থাকুক আপনার শিশু আদরে আর যত্নে ।

Discover more from Health Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Health Bangla
error: Content is protected !!