Ramadan diet

রোজাদারগণের খাদ্যাভ্যাস

রমজান মাস রোজাদারের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার একটি দারুণ সুযোগ। রোজার উপরোল্লিখিত উপকার পেতে হলেও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরী। রোজার সময় মুসলিমরা সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার পর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, অফিসের সহকর্মী সবাই মিলে এক সাথে বসে ইফতার গ্রহণ করেন। ফলে, এর মধ্যে এক ধরণের উত্সব মুখরতাও কাজ করে। ইফতারকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর প্রান্তে বিভিন্ন ধরণের আয়োজন চলে। তবে বাংলাদেশে, পাকিস্তান এবং ভারতে প্রায় একই ধরণের আয়োজন করতে দেখা যায়। বাংলাদেশে ইফতারকে কেন্দ্র করে বাসায় বিভিন্ন ধরণের ইফতার সামগ্রীর আয়োজন চলে। ফুটপাতে, হোটেলে, খাদ্যসামগ্রীর দোকানে নানা স্বাদের ও গন্ধের ইফতার বিক্রির পসরা বসে। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরণের শরবত, ফলমূল, ভাজাপোড়া ও অন্যান্য ভারী খাবার।

খেজুর

 শরবতের মধ্যে আছে লেবুর শরবত, মাঠা, লাচ্ছি, বিভিন্ন ফলের রস ও অন্যান্য। বাংলাদেশে রমজান মাসেই খেজুর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এছাড়া আপেল, কলা, আনার, মাল্টার পাশাপাশি ঋতুভেদে নাসপাতি, সফেদা, আম, তরমুজ ও কমলা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে রোজা এলেই বিপুল পরিমাণ ভাজা পোড়া খাবারের আয়োজন শুরু হয়। এর মধ্যে পেয়াজু, বেগুনী, আলুর চপ, ছোলা, মুড়ি অথবা চিড়া তো থাকবেই। সাথে থাকে গরু ও খাসির গোসত দিয়ে তৈরী বিভিন্ন ধরণের কাবাব, জিলাপী, হালিম, দই, পড়া, পাকুড়া ও মুরগী ফ্লাই। ভারী খাবারের মধ্যে রয়েছে তেহারী, বিরিয়ানী, খিচুড়ী, পোলাউ, রোস্ট, কোর্মা ও রেজালা। এছাড়া ইফতারের জন্য প্রসিদ্ধ পুরনো ঢাকায় বিচিত্র সব ইফতার সামগ্রীর আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে অধিকাংশ স্থানেই ইফতারের পর তারাবীর নামজ শেসে মধ্যরাতের খাবার গ্রহণ করা হয়। মধ্যরাতের খাবারের মেন্যুতে সাধারণত: ভাত ও রুটির সাথে বিভিন্ন ধরণের ভর্তা, শাক, সবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদির আয়োজন থাকে। মাঝে মাঝে ভারী খাবারের ইয়োজনও করা হয়। বিশে করে পুরনো ঢাকায় নিয়মিত তেলযুক্ত ভারী খাবার তথা তেহারী, বিরিয়ানী ও পোলাউর আয়োজন করতে দেখা যায়। সাহরীর সময়ও মধ্যরাতের মতই আয়োজন থাকে। পাশাপাশি দুধ এর সাথে কলা, আম, গুড় দিয়ে ভাত খাবার প্রচলন আছে।
এত রকম খাবারের ভিড়ে মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের অভ্যাস গড়ে তোলা। আমি যদি রমজানের সব উপকারিতা পেতে চাই, আমাকে খাবারের মেন্যু ঠিক করতে হবে বুদ্ধিমত্তার সাথে। যেহেতু রোজার সময় সারাদিন না খেয়ে থাকার পরে বেশ ক্ষুধা লাগতে থাকে, ফলে ইফতারে যে কোন ধরণর খাবার খাওয়ার প্রতি আলাদা আকর্ষণ কাজ করতে থাকে। বিশেষ করে তেলে ভাজা খাবার এবং ভারী খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেশী অনুভূত হয়। অতএব, রমজান মাসকে কাজে লাগয়ে যদি আমরা শারীরিক উপকার অর্জন করে  নিতে চাই আমাদের ইফতার ও সেহরীরের  খাবার চয়নে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা দরকার।

রোজাদারগণের খাদ্যাভ্যাস

১. রাস্তার পাশে ও ফুটপাতে যে সব খাবার সামগ্রী বিক্রয় করা হয় তা তৈরী করতে একই তেল পুন:পুন: ব্যবহার করা হয়। সয়াবিন ও পাম তৈল বার বার গরম করা হলে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর হাইড্রোকার্বন তৈরী হয়, যা খাদ্যের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বার বার ব্যবহূত তেলে ভাজা খাবার খেলে হার্টের সমস্যা, এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। এ কারণে ইফতারের সময় দোকানের খাবারের পরিবর্তে বাসায় বানানো খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে। এছাড়া রাস্তার পাশে যে শরবত ও পানীয় বিক্রয় হয় তা পান করলে ডায়রিয়া ও ভাইরাল হেপাটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতএব এগুলো পান থেকে বিরত থাকা উচিত।
২. বেশী তেলে ভাজা, পুনপুন: একই তেলে ভাজা এবং তৈলযুক্ত ভারী খাবার পরিহার করতে হবে। কারণ বেশী চর্বি ও তৈলযুক্ত কাবার খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। যা রক্তনালীতে জমা হয়ে উচ্চরক্তচাপ, হার্ট এ্যাটাক ও ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। পেয়াজু, চপ, বেগুনী, ছোলা ইত্যাদি বাসায় কম তেলে ভেজে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ভেজানো চিড়া, গুড় ও চিনির শরবত দিয়েও ইফতার করতে পারেন।
৩. নিয়মিত খাবর হিসেবে ইফতারের সময় খেজুর সহ বিভিন্ন মিষ্টি ফল এবং মিষ্টি শরবত রাখা যেতে পারে। কারণ যেহুেত সারাদিন উপোষ থাকর পর রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ কমে যায়, সেহেতু যে খাবার দ্রুত রক্তে গ্লুকেজের পরিমাণ বাড়তে পারে, এমন খাবার ইফতারে রাখা দরকার। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সবজির আইটেম থাকা দরকার। এছাড়া রুচির বিভিন্নতা আনতে দই-চিড়া, সুপ, হালিম রাখা যায়। তবে অবশ্যই তা পরিমিত হতে হবে।
৪. বাংলাদেশে দুপুরে ও রাতে যে খাবারগুলো আয়োজন থাকে তা সাধারণত: স্বাস্থ্যকর ও সুপাচ্য হয়। সে হিসেবে একই খাবার যথাক্রমে মধ্যরাতে এবং সাহরীর সময় খাওয়া যাবে। মধ্যরাতের খাবারে ভাত বা রুটির সাথে পর্যাপ্ত সবজি এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রোটিন সরবরাহের জন্য মাছ, ডিম ইত্যাদি রাখতে পারেন।  গরু ও খাসীর মাংসের ক্ষেত্রে চর্বি ছাড়িয়ে নেয়া জরুরি। মাঝে মাঝে রুচির বৈচিত্র আনতে খিচুড়ী, পোলাউ, রোস্ট, রেজালা ইত্যাদি ভারি খাবারের আয়োজন করা যায়। তবে এগুলো মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন এ খ্বারগুলো নিয়মিত রুটিনে পরিণত না হয়।
৫. শেষ রাতের খাবার এমন হতে হবে যা সুপাচ্য এবং দিনের শুরুতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দিতে পারে। এজন্য সাহরীর খাবারে রুটি বা ভাত থাকা জরুরী। ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদিকে বলে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট (শর্করা)। যা ধীরে ধীরে হজ হয়। যেহেতু দিনে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হবে সেহেতু শুধু শরবত বা অন্যান্য চিনি কিংবা দুধের তৈরী খাবার সাহরীতে গ্রহণ না করাই ভালো।
৬. প্রত্যেক বেলার খাবারে পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং অতিরিক্ত লবণ পরিহার করা জরুরী। উপরোক্ত বিষয়গুলো সুস্থ মানুষের পাশাপাশি যারা ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপের ইত্যাদি রোগে ভুগছেন তাদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে রোগ ভেদে খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Health Bangla
Exit mobile version