ঝেঁকে বসেছে শীত। শুষ্ক হয়ে উঠেছে আবহাওয়া। একই সাথে শুষ্ক হয়ে উঠছে আমাদের ত্বক। সুন্দর চেহারা বা রূপের জন্য স্বভাবতই প্রথমে পরিচর্যা নিতে হয় ত্বকের। আর শীতে তো কথাই নেই। ত্বকের প্রধান শত্রু শীত। আরও বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে এ সময়। তবে শীতে ত্বকের শুষ্কতা মারাত্মক রূপ নেওয়ার আগে কিছুটা যত্ন নিলেই ত্বককে কোমল, সজীব করা সম্ভব।
শীতে ত্বকের বাড়তি যত্ন
শীতের প্রকোপটা এখন হাড়ে হাড়েই টের পাওয়া যাচ্ছে। শীত এলে সবার মধ্যে একটা ব্যাপার লক্ষ করা যায়, সবাই ত্বক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন ধরনের ক্রিম, লোশন, ময়েশ্চারাইজার সংগ্রহের ধুম পড়ে যায়। মূলত শীতকালে ত্বকের থেকে ময়েশ্চারাইজার কমে গেলেই ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। আপনি চাইলে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারেন। শীতে বাজারে প্রচুর সবজির আধিক্য দেখা যায়। প্রোটিনের পাশাপাশি সবজির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন—ভাত, রুটি কমিয়ে দিলে দেহ, মন ও ত্বকের সতেজ ভাব এনে দিবে। সকালে একটা রুটির ভাঁজে দিতে পারেন নানা পদের সবজি সিদ্ধ, শুধু একটু লবণ আর গোল মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে। দুপুরে ভাত, রুটির পরিমাণ কমিয়ে টেবিলে নানা পদের সালাদ, শাক, সবজি ও সাথে ১-২ টুকরা মাছ বা মাংস খেলে দেহ-মন সতেজ থাকে।
সন্ধ্যায় এই শীতে আমরা স্যুপ, দুধ, একটু মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার দিয়ে সেরে ফেলতে পারেন আপনার ডিনার। টক জাতীয় ফল যেমন জলপাই, কামরাঙা, জাম্বুরা, কমলা, বড়ই ভিটামিন সি-এর ঘাটতি মিটায়, সাথে মুখে এনে দেবে রুচি। দাঁত ও মাড়ির সুস্থতা, ত্বক, চোখ, চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ফল ও সবজির তুলনা নেই।
এ ছাড়া শীতে ধুলাবালির পরিমাণ একটু বেশি থাকে। কিন্তু রাস্তায় সবাইকে বের হতেই হয়। এই ধূলাবালির হাত থেকে রেহাই পেতে আপনাকে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বাইরে বের হলে চুলে স্কার্ফ পরতে পারেন। চুলে প্রতিদিন ভালো কোনো শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেললে ধুলাবালির হাত থেকে চুলকে রক্ষা করা যায়, খুসকি জনিত ঝামেলা আর থাকবে না। প্রতিদিন অন্তত ১-২ বার ভালো করে চুল আঁচড়িয়ে ফেলতে হবে। ১৫ দিনে একদিন আমরা চুলে হট অয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন। শীতে প্রতিদিন গোসল করলে শরীর, মন ভালো থাকে, ধুলাবালি থাকে না। গোসলের পরে আর রাতে ঘুমানোর আগে আমরা ময়েশ্চার জাতীয় লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়ার লক্ষণ এই শীতে বেশি দেখা যায়। ঘুমানোর আগে গ্লিসারিনের সাথে পানি বা গোলাপজল মিশিয়ে লাগালে এই ফেটে যাওয়া গোড়ালি ফিরে পাবে মসৃণতা। ঘরে বসে সেরে নেওয়া যায় মেনিকিউর বা পেডিকিউর। পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহারে ঠোঁট, হাত, পা, ত্বক মসৃণ থাকে।
সেইসাথে আপনাকে সব সময় মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। প্রতিদিন গোসল করুন। যথা সম্ভব হাঁটুন, সকালের মিষ্টি রোদে খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে ঘুরবেন। এতে আপনার মন, ত্বক, শরীর ঝরঝরা হয়ে উঠবে।
শীতে ত্বকের টিপস
- হালকা গরম পানিতে গোসল ও ত্বকের ধরন অনুযায়ী গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করুন।
- ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম দিনে কম করে হলে দুইবার দিন।
- পা ফাটার ঝামেলাও কম নয়। ফাটা ত্বকে ভ্যাসলিন বা গ্লিসারিনের সাথে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে হাত ও পায়ের গোড়ালিতে মাখুন। বিশেষভাবে রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করা উত্তম।
- ঠোঁট নিয়মিত পরিষ্কার করে ভ্যাসলিন ব্যবহার করতে পারেন। এ সময় ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার না করাই উত্তম। তবে চ্যাপস্টিক ও লিপ গ্লস উপকারী।
- অলিভ অয়েল ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী। দিনে একবার অন্তত ব্যবহার করুন। বডি লোশনও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- গোসলের পানিতে বিভিন্ন ভেষজ দ্রব্য বা সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করতে পারেন।
- সপ্তাহে একবার ক্রাকার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা জরুরি।
- মাসে দুইবার মেনিকিউর, পেডিকিউর ও একবার ফেসিয়াল করা প্রয়োজন।
- নিয়মিত সুষম খাদ্য, প্রচুর শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা উত্তম।
- ছোঁয়াচে চর্মরোগে আক্রান্তদের সংস্পর্শে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উত্তম।
- অ্যালার্জি, একজিমা জাতীয় ত্বকের রোগ হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
Thank You.
Discover more from Health Bangla
Subscribe to get the latest posts sent to your email.