শারীরিক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ওষুধ

অনিদ্রা দূর করার ১০ উপায়

স্বাভাবিক বা সুস্থ্য প্রাপ্ত বয়স্কদের সাধারনতঃ ছয় থেকে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।কিন্তু কেউ কেউ ছ’ঘন্টার কম ঘুমিয়েও স্বাভাবিক থাকতে পারে।বয়স বাড়ার সংগে সংগে ঘুমও কমতে থাকে,এমনকি এর পরিমান চার ঘন্টারও কম হয়ে যেতে পারে।কারো কারো ঘুমের পরিমান কম লাগে, কারও আবার অনেক বেশী লাগে।

শারীরিক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ওষুধ
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমের জন্য আকুতি কতজনের

শিশুরা সাধারনতঃ নয় থেকে এগারো ঘন্টা ঘুমোয়।অবশ্য কয়েক মাসের শিশুরা প্রায় দিনের বেশীর ভাগ সময়ই ঘুমাতে পারে।

যার চোখে ঘুম আসে না সেই বুঝে ঘুম না আসার যন্ত্রণা। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমের জন্য আকুতি কতজনের। একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৫-৭ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘুমটুকু ঘুমাতে পারেন না অনেকে। নিদ্রাদেবীকে হটিয়ে দিয়ে অনিদ্রা এসে জুড়ে বসে মহাভারতের দুর্যোধনের মতো অপাঙক্তেয়ভাবে। ভাবতে অবাক লাগে, আমাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে অন্তত একজন অনিদ্রায় ভোগেন। ডাক্তারের পিছনে লক্ষ টাকা ঢেলে ও উপকার পান নাই।ঘুমের ঔষুধ ছাড়া ঘুমাতে পারেন না।আপনার আশেপাশেই র‌য়েছে এমন অনেক মানুষ। আপনি কি তাদের মত ঘুমাতে পারছেন না?

ঘুম না আসার যন্ত্রণা
ঘুম না আসার যন্ত্রণা

অনিদ্রার চিকিত্সা কি,আদৌ কি সম্ভব অনিদ্রা থেকে মুক্তি পাওয়া? গবেষকদের শেষ নেই এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণার। বর্তমান লেখাটিতে অনিদ্রা থেকে মুক্তি পাওয়ার বেশ কিছু পরামর্শ দেয়া হলো। পরামর্শগুলো মেনে চললে আপনার চোখে নেমে আসতে পারে সুখকর এক চমৎকার ঘুম।

১. উত্তেজক কোনো কিছু পরিহার করুন

শারীরিক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ওষুধ বা মাদক পরিহার করলে আপনি তলিয়ে যেতে পারেন ঘুমের অতল রাজ্যে। অনেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সিগারেট কিংবা কফি পান করেন। এ দুটোই ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। সিগারেটের নিকোটিন এবং কফির কেফিন স্নায়ুর উত্তেজনা ঘটিয়ে তাড়িয়ে দেয় ঘুমটাকে। একই কথা প্রযোজ্য চকোলেট এবং ব্যথানাশক ওষুধের ক্ষেত্রে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধগুলোও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। যারা চাইনিজ খাবারের অভ্যস্ত তাদেরও দেখা দেয় অনিদ্রা। অনেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অরেঞ্জ স্কোয়াশ বা কমলালেবুর পানীয় পান করেন। কিন্তু এতে থাকে টারট্রাজিন নামক এক ধরনের রঙ, যা অনিদ্রা ঘটায়। তাই সুখকর ঘুমের জন্য এ সবকিছুই পরিহার করতে হবে।

২. অ্যালকোহল ত্যাগ করুন

কারো কারো ধারণা অ্যালকোহল ঘুমের জন্য বেশ সহায়ক। কিন্তু অতিরিক্ত অ্যালকোহল মস্তিষ্কে ঘুমের ছন্দে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। অ্যালকোহল পানে একটানা ঘুম হয় না, বারবার ঘুম ভেঙে যায়। অনেক সময় ঘুম আসেই না। তাই ভালো ঘুমের জন্য ত্যাগ করতে হবে অ্যালকোহলের মায়াটুকু।

৩. দুধ পান করুন

দুধ
দুধ

অনেকের অবশ্য দুধ হজম হয় না। কিন্তু যাদের দুধপানে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটে না তারা ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধ পান করতে পারেন। দুধ, হরলিকস কিংবা ওভালটিনে থাকে ট্রিপটোফেন নামক অ্যামাইনো এসিড, যা মস্তিষ্কে গিয়ে সেরোটোনিন নামক রাসায়নিক উপাদানে রূপান্তরিত হয় এবং আপনার ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।

৪. ঘুমের ওষুধ খাবেন না

ঘুমের ওষুধ
ঘুমের ওষুধ

কেউ কেউ ঘুমের জন্য নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খান। কিন্তু এটা চলতে থাকলে ওই ওষুধটার প্রতি নির্ভরতা চলে আসে যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই চেষ্টা করুন ঘুমের ওষুধ বাদ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই ঘুমাতে।

৫. ক্ষোভ পুষে রাখবেন না

মনের মধ্যে ক্ষোভ, রাগ প্রভৃতি পুষে রাখলে তা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে। বিছানায় যাওয়ার আগেই আপনার ক্ষোভ দূর করুন। একা একা সুর দিয়ে গান করুন। প্রশমিত করুন মনটাকে। কারো সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়লে সমঝোতায় আসুন তার সাথে।

৬. সালাদ খান বেশি করে

সালাদ খান
সালাদ খান

আপনি যদি নিয়মিত লেটুস খান আপনার ঘুমটা ভালো হবে। যদিও সালাদ ঘুমের জন্য বেশ সহায়ক তবু এর মধ্যে লেটুস নিদ্রা উদ্রেককারী হিসেবে কাজ করে। তাই আপনি যখন সালাদ খাবেন সালাদে লেটুস খেতে ভুলবেন না।

৭. দূর করুন শারীরিক রোগ

ঘুম না আসাটা শুধু মানসিক কারণ কিংবা অন্যান্য কারণই নয়, শারীরিক কারণও এ ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক শারীরিক অসুখে ঘুম আসে না। আপনার ঘুম না এলে আপনি কোনো শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন কি না তা নিশ্চিত হতে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হোন।

৮. বিছানায় রাখুন সুগন্ধি

প্রাচীন লোকেরা ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘরে ছিটিয়ে দিতেন সুগন্ধি। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু কিছু সুগন্ধি যেমন- পুঁদিনা, কর্পূর, সাইপ্রাস, লেবু, মেলিসা, গোলাপ, চন্দন প্রভৃতি পত্রবিশেষ গুল্মের সুগন্ধি নিদ্রা ডেকে আনে। তাই আপনার বিছানায় এসব সুগন্ধি মেখে রাখতে পারেন।

৯. গান শুনুন ধীরলয়ে

গান শুনুন
গান শুনুন

হার্ড গানগুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় কিন্তু আপনি যদি লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে শরীরটাকে শিথিল করে ধীরলয়ে গান শুনতে থাকেন দেখবেন এক সময় ঘুমের ঢল নেমে আসবে আপনার চোখে।

১০. দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন

দুশ্চিন্তা অনিদ্রার অন্যতম কারণ। সব সময় চেষ্টা করুন দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে। অনেকে আবার দুশ্চিন্তা করেন ‘ঘুম আসছে না’ এই ভেবে। ঝেড়ে ফেলুন সব দুশ্চিন্তা। অবগাহন করুন ঘুমের গহিন সমুদ্রে।

আশা করি আজ থেকে আর কোনদিন আপনার ঘুমের ওষুধ লাগবে না। যখন-তখন ইচ্ছামত ঘুমাতে পারবেন।

ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল

আবাসিক সার্জন

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

সার্জারি ও মূত্ররোগ বিশেষজ্ঞ

চেম্বার:ল্যাব সাইন্স ডায়াগনস্টিক লিঃ

১৫৩/১ গ্রিন রোড, ঢাকা।


Discover more from Health Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

0 thoughts on “অনিদ্রা দূর করার ১০ উপায়”

Leave a ReplyCancel reply

error: Content is protected !!

Discover more from Health Bangla

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Exit mobile version