বুকের দুধ

বুকের দুধ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং সঠিক পন্থা

শিশু জন্মের পর সাধারণত মা ও শিশুর পাশে পরিবারের বয়োজেষ্ঠ্যরা থাকেন। না জানার কারণে তারা মা ও শিশুর খাবার, খাবারের পরিমাণ, পুষ্টি, খাওয়ানোর কৌশল নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন, যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর।

বুকের দুধ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং সঠিক পন্থা

ভুল ধারণা: সন্তান প্রসবের পর প্রথম তিন দিন মায়ের বুকের ‍দুধ আসে না, তাই এই সময় শিশুকে মধু, মিসরির পানি বা অন্য কোনো দুধ খাওয়াতে হয়। তিন দিন পর যখন মায়ের স্তন ভারি অনুভব হবে তখনই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

বুকের দুধ
বুকের দুধ

সঠিক: প্রসবের পরপরই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। ওই সময় মায়ের বুকে যতটুকু শালদুধ আসে ততটুকুই শিশুর জন্য যথেষ্ট। শিশু যত ঘনঘন মায়ের বুকের দুধ পান করবে, বুকে ততো তাড়াতাড়ি দুধ আসবে। এজন্য তিন দিন অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। এ সময় শিশুকে অন্য কোনো খাবার দিলে তার ছোট পেট ভরে থাকবে, মায়ের দুধ খেতে চাইবে না এবং মায়ের বুকে দুধ দেরিতে আসবে।

 

ভুল ধারণা: নবজাতক বা শিশু কান্নাকাটি করলে মনে করা হয় যে তার ক্ষুধা লেগেছে।

সঠিক: নবজাতক অনেক কারণে কান্নাকাটি করে থাকে, বিশেষ করে জন্মের পরপরই পৃথিবীর নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে তার একটু সময়ের দরকার হয়। এছাড়া সে মায়ের কোলে বা বুকে থাকতে চায়, অতিরিক্ত গরম অথবা ঠাণ্ডার কারণেও কান্নাকাটি করতে পারে। কান্নার সঠিক কারণ খুজেঁ বের করা অবশ্যই দরকার। শুধু ক্ষুধার জন্য কান্নাকাটি করে, এমনটি ভাবা উচিৎ নয়।

 

ভুল ধারণা: মা শাক-সবজি, ডাল বা মাছ-মাংস ইত্যাদি বা ঝোল জাতীয় খাবার খেলে শিশুর ঠাণ্ডা লাগে বা কাশি হয় এবং মায়ের বুকের দুধের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া প্রসবের পরপরই যদি মা এই খাবারগুলো খান তবে শরীরের রস বা জরায়ু শুকাতে দেরি হয়, তাই শুকনো রুটি, শুধু লবণ বা ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে দেয়া উচিৎ।

সঠিক: মায়ের খাদ্যাভাসের কারণে বুকের দুধের পরিবর্তন হয় না, যেমন- মা সাধারণ মসলাযুক্ত খাবার, শাক-সবজি, ফল, মাছ-মাংস যাই খান না কেন তার কারণে শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না, বরং মাকে কম খেতে দিলে মা দুর্বল হয়ে পড়েন এবং অপুষ্টিতে ভোগেন। তাই কোনো মায়ের বেছে খাওয়া উচিৎ নয়। প্রতি বেলায় স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে একবাটি সবজি (১ পোয়া বাটির), ১ বাটি ডাল (১ পোয়া বাটির) বেশি খাবেন। এছাড়া দেশি ফল খাবেন। পানিও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় খাওয়া যাবে (গরম নয়) এবং দিনে ৮ গ্লাস পানি পান করবেন।

 

ভুল ধারণা: সিজারিয়ান ডেলিভারির ক্ষেত্রে শিশু প্রথম ২ থেকে ৩ দিন ভালোভাবে বুকের দুধ পায় না বা দুধ খাওয়াতে পারেন না। এছাড়া ওষুধ খাওয়ার কারণে বুকের দুধ শুকিয়ে যায়।

সঠিক: সিজারিয়ান ডেলিভারি হলেও মায়ের বুকে ভালোভাবে দুধ আসতে পারে, যদি জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে মায়ের দুধ খেতে দেওয়া হয়। অপারেশনের পর মা শুয়ে শুয়ে শিশুকে দুধ খাওয়াতে পারবেন, তবে এ সময় হাসপাতালের দক্ষ সহযোগীতা প্রয়োজন। শিশু যদি খুব ছোট হয় এবং মায়ের বুকের দুধ খেতে না পারে, তখন প্রয়োজনে মায়ের দুধ চিপে বের করে চামচে করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, ওষুধে মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যায় না।

 

ভুল ধারণা: বুকের দুধের পরিমান বাড়ানোর জন্য মাকে বিশেষ বিশেষ খাবার খেতে হয়, যেমন- লাউয়ের ঝোল, শিং মাছের ঝোল, ছোট মুরগি, কবুতরের বাচ্চা, দুধ, সাগু ইত্যাদি। এসব খাবারের অভাবে মায়ের বুকের দুধের পরিমান কমে যায়।

সঠিক: মা এ ধরনের খাবার অবশ্যই খেতে পারেন, তবে এই খাবার না খেলে মায়ের বুকে দুধ তৈরি হবে না বা বুকের দুধের পরিমান কমে যাবে, এটা ঠিক নয়। ঘরে যা রান্না হবে তাই একটু বেশি করে মাকে খেতে হবে। তাহলেই প্রয়োজনমতো দুধ আসবে।

 

ভুল ধারণা: ৬ মাস বয়সের পর থেকে শিশু পারিবারিক সব ধরণের খাবার খেতে পারে বা হজম করতে পারে।

সঠিক: শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে পারিবারিক বাড়তি খাবার দিতে হবে। তবে যেসব খাবার সে হজম করতে পারবে সেগুলোই দিতে হবে।

 

ভুল ধারনা: প্যাকেট বা টিনজাত খাবার বা তৈরি খাবার, যেমন- জুস, চিপস, বিস্কুট, হরলিকস ইত্যদি শিশুর জন্য পুষ্টিকর।

সঠিক: প্যাকেট বা টিনজাত খাবার বা তৈরি খাবার শিশুর জন্য পুষ্টিকর নয়। এ ধরনের খাবার অনেক সময় শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ এবং ক্ষুধা নষ্ট করে। শিশুকে কখনই বাইরের খাবার অভ্যাস করানো উচিৎ নয়, বরং এসবের পরিবর্তে মাছ, মাংস, কলিজা, ডিম, বিভিন্ন ধরণের দেশি ফল, ঘরে তৈরি নাস্তা শিশুকে দেয়া উচিৎ।

 

ভুল ধারণা: একটু বেশি বিরতি দিয়ে বুকের দুধ খাওয়ালে বুকে অনেক দুধ জমবে এবং শিশু বেশি দুধ পাবে। বুক ভারি না হলে বা নরম থাকলে বুকে দুধ কম আছে ধরে নিতে হবে।

সঠিক: শিশুরা যখনই খেতে চাইবে তখনই বুকের দুধ দিতে হবে। শিশুকে বারে বারে দুধ না দিলে মায়ের দুধ উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যাবে, এমনকি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রাতের বেলায়ও বুকের দুধ দিতে হবে, ফলে পরের দিন মায়ের বুকে আরও বেশি দুধ তৈরি হবে।


Discover more from Health Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

0 thoughts on “বুকের দুধ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং সঠিক পন্থা”

  1. মেয়েদের বাচ্চা হওয়া আগে দুধ আসলে কি সমস্যা?
    আসলে কি করনীয়? ভয় পাওয়ার কোন কারন আছে? দয়াকরে জানাবেন! ৭৭

Leave a ReplyCancel reply

error: Content is protected !!

Discover more from Health Bangla

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Exit mobile version