আর্থ্রাইটিস রোগীর বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা রয়েছে যেমন- ওষুধপত্র, ব্যায়ম, অকুপেশনাল থেরাপি, মানসিক পরামর্শ, সার্জারি। কিন্তু একটি কথা মনে রাখতে হবে কোনো চিকিৎসায় আথ্রাইটিস সম্পূণ ভালো হয়না, বিশেষ করে রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস কিংবা অস্ট্রিওআথ্রাইটিস। ইনফেকশাস আথ্রাইটিস ভিন্ন কথা।
এটি অ্যান্টিবায়োটিকে ভালো সাড়া দেয়। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আর্থ্রাইটিস যদি নাই সারে তাহলে আমি শুধু শুধু চিকিৎসা করাতে যাবো কেন।
বাত রোগের কার্যকর চিকিৎসা
এর উত্তরে বলা যায়-মেডিক্যাল চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যথামুক্ত থাকা ও প্রদাহ কমানো যায়। এ রোগের অগ্রসরণ মন্থর করে দেয়া,অস্থিসন্ধিকে স্থায়ী ক্ষতিগ্রস্তের হাত থেকে রক্ষা করা, প্রয়োজনে সার্জারির মাধ্যমে অস্থিসন্ধির কাজকর্মের উন্নতি ঘটানো, সারা জীবন রোগীকে ও রোগীর অস্থিসন্ধিগুলোকে সচল রাখা যায়। একজন রোগীর জন্য কোনো একক চিকিৎসা নেই। বেশির ভাগ রোগীর সমন্বিত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। দেখা গেছে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন, ব্যায়াম ও ভিটামিটই ভালো কাজ করে, অন্যান্য রোগীর ক্ষেত্রে গোল্ডমল্ট, হট বাথ ও মাছের তেল ভালো কাজ করে; আবার অন্যদের ক্ষেত্রে কোনো ওষুধই কোনো কাজ করে না।
জেনে নিন সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস কি? কিভাবে রোগ নির্ণয় চিকিত্সা করবেন?
অস্থিসন্ধি বা মাংশপেশির ব্যথার ক্ষেত্রে যদি আপনার ব্যথা তীব্র না হয় এবং তা কয়েক দিনের বেশি না থাকে তাহলে আপনার আর্থ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু যদি আপনার ব্যথা কয়েক দিনের চেয়ে বেশি থাকে, কয়েক সপ্তাহ পর আবার দেখা দেয় কিংবা ব্যথা এত তীব্র হয় যে তা আপনার স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায় তাহলে বুঝতে হবে চিকিৎসক দেখানোর সময় হয়েছে। এক বা একাধিক অস্থিসন্ধিতে ফোলা থাকলে বুঝতে হবে সেখানে কোনো সমস্যা আছে। একইভাবে শরীরের দু’পাশের অস্থিসন্ধিগুলোতে একই সময়ে ব্যথা হলে কিংবা অস্থিসন্ধির ব্যথার সাথে অবসন্নতা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
যদি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধগুলো যেমন অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রফেন খেয়ে আপনার অস্থিসন্ধির ব্যথা কমে যায় তাহলে দয়া করে আত্মতুষ্টির ভুগবেন না। যদি আপনি নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ খান এবং ওষুধ বন্ধ করলে আবার ব্যথা ফিরে আসে, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে ভুল করবেন না।
চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে দেরি করে গেলে আপনি কি পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন? হ্যাঁ, সময় মতো চিকিৎসা না করিয়ে চিকিৎসকের কাছে বিলম্বে গেলে আপনি পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন। যদি আপনার সেপটিক আর্থ্রাইটিস হয় তাহলে মারাত্মক ক্ষতি এড়াতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অস্থিসন্ধির ইনফেকশনের চিকিৎসা করতে হবে। সংক্রমিত অস্থিসন্ধি লাল হয় ও ফুলে যায় এবং এটার তাত্ক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
জেনে নিন রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেশি? – গেঁটে বাত নাতো?
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের (Rheumatoid Arthrities) ক্ষেত্রেও যদি আপনি চিকিৎসা নিতে দেরি করেন তাহলে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ চিকিৎসক মনে করেন যদি আপনি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিতে দেরি করেন তাহলে আপনার অস্থিসন্ধিতে স্থায়ী বিকলাঙ্গতা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে এটা জানা গেছে যে অস্থিসন্ধির স্থায়ী ক্ষতি বেশ আগেই ঘটে কখনো কখনো উপসর্গ দেখা দেয়ার কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের মধ্যে। বিস্তারিত সাইনোভিয়াল টিস্যু অস্থিসন্ধির মধ্যে কার্টিলেজকে আক্রমণ করে, এর ফলে কার্টিলেজ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। একবার এই ক্ষতিসাধন হলে তা আর আগের অবস্থায় ফিরে আসে না। এ জন্য বর্তমানে অনেক চিকিৎসক বিশ্বাস করেন রোগের শুরুতেই চিকিৎসা করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে রোগীকে পরবর্তীতে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় না।
প্রশ্ন : অস্টিওআর্থ্রাইটিস বলতে কী বোঝানো হয়?
উত্তর : অস্টিও হলো হাড় আর আর্থ্রাইটিস হলো অস্থিসন্ধির ব্যথা। ক্ষয়জনিত কারণে কোনো গিঁটে, অস্থিসন্ধিতে যে ব্যথাগুলো হয়, তাকে আমরা অস্টিওআর্থ্রাইটিস বলে থাকি। যদিও সব অস্থিসন্ধিতেই অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে পারে, তবুও আমাদের দেশের মানুষের অস্টিওআর্থ্রাইটিস হাঁটুতেই বেশি হয়।
প্রশ্ন : হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে যখন আসছে, তখন আপনারা কীভাবে বোঝেন যে এটি অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ব্যথা?
উত্তর : সাধারণত রোগী এসে বলে আমার পা ব্যথা করে, ফুলে যায়। বলে যে অনেক সময় পা গরম হয়ে যায়। তখন আমরা তাকে পরীক্ষা করে দেখি।
পরীক্ষার মধ্যে আমরা প্রথম দুই হাঁটু উন্মুক্ত করে দেখি। দেখি যে স্বাভাবিক হাঁটু কেমন আছে, আর অসুস্থ হাঁটুটি কেমন আছে। ফুলে গেছে কি না বা তার ত্বকের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না। কিংবা আমরা দেখি যে সেখানে গরম হয়েছে কি না। এগুলো আমরা দেখি। দেখার পর আমরা তাকে কিছু পরীক্ষা দিই। এক্স-রে করে দেখি।
অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রেও প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করাতে হবে। অবশ্য স্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই যে প্রাথমিক চিকিৎসা করলে অস্টিও আর্থ্রাইটিস ভালো হবে, কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসা করালে যে লাভটা হয় তাহলো আপনি আপনার অসুস্থ অস্থিসন্ধিকে রক্ষা করার জন্য এবং তাকে দীর্ঘ জীবনদানের জন্য কিছু শিখতে পারেন। সিঁড়ি দিয়ে নিয়মিত দৌড়ে ওঠা নামা করলে আপনার ব্যথা চলে যাবে এবং আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন এমন উদ্ভট চিন্তা কখনোই মাথায় আনবেন না। এতে আপনার আরো ক্ষতি হবে এবং অস্থিসন্ধিতে যে ধরণের সমস্যাই হোক না কেন, দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসক দেখানো উত্তম।
Discover more from Health Bangla
Subscribe to get the latest posts sent to your email.