গর্ভবতী অবস্থায় একজন নারী Hepatitis ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ই’ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বা থাকতে পারে। হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলোর মধ্যে ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস স্বল্পমেয়াদী লিভার প্রদাহ করে এবং ‘বি’ ও ‘সি’ দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ করে।
গর্ভবতী অবস্থায় Viral Hepatitis
গর্ভবতী অবস্থায় Viral Hepatitis
হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস ছড়ায় দূষিত পানির মাধ্যমে। আক্রান্ত হলে জন্ডিস, বমি বমি ভাব, বমি, ক্ষুধামন্দা, পেটের ডান দিকে বুকের নিচে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর মধ্যে ‘এ’ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা নিজে নিজেই কমে আসে এবং মায়ের রক্ত দিয়ে ফিটাসে ‘এ’ ভাইরাস পরিবাহিত হয় না। তবে এশিয়া অঞ্চলে ‘ই’ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গর্ভবতী মায়ের লিভার ফেইলিউর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। লিভার ফেইলিউর হলে মায়ের মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৩০ শতাংশ এবং গর্ভস্থ ফিটাসের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় ৫০ শতাংশ। এজন্য এই ভাইরাসদ্ব্বয়ের আক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গর্ভবতী অবস্থায় Viral Hepatitis
গর্ভবতী অবস্থায় Viral Hepatitis নিয়ে একটি ভিডিও দেখুন
‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস লিভারে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ করে। ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীর শরীর থেকে ফিটাসে ‘বি’ ভাইরাস পরিবাহিত হতে পারে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহে (ক্রনিক হেপাটাইটিস) আক্রান্ত নারীর এন্টি ভাইরাল ড্রাগ (Anti Viral Drug) দিয়ে চিকিত্সা করতে হয়। এ সময় আক্রান্ত নারীকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হয়। যদি ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি হতে থাকে সেক্ষেত্রে বিশেষ ওষুধ প্রয়োগে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি রোধ করতে হয়। নতুবা ভ্রুণে ভাইরাস পরিবাহিত হওয়ার আশঙ্কা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। এমতাবস্থায় গর্ভস্থ বাচ্চার সুস্থ বিকাশের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের অধীনে থেকে চিকিত্সা করানো অপরিহার্য। বাচ্চাকে প্রসবের পর পর অবশ্যই হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের টিকা ও ইমিউনোগ্লোবিউলিন (Immunoglobulin) দিতে হয়। ‘সি’ ভাইরাস সাধারণত মা থেকে ফিটাসে পরিবাহিত হয় না এবং ‘সি’ ভাইরাসের ভ্যাক্সিন তৈরীর প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত আছে।
সিরোসিসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারী
যে সকল নারী পূর্ব থেকেই ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাসজনিত লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত তারা সাধারণত গর্ভবতী হন না। তবে হলেও গর্ভস্থ বাচ্চা মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ‘বি’ ভাইরাসজনিত সিরোসিসের ক্ষেত্রে সিরোসিস যদি প্রাথমিক পর্যায়ের হয় সেক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী লিভারে প্রদাহে আক্রান্ত রোগীর মত তার ক্ষেত্রে বিশেষ এন্টি-ভাইরাল ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা করতে হবে। আক্রান্ত মায়ের রক্তে যদি ‘বি’ ভাইরাসের পরিমাণ বেশী থাকে মাকে বুকের দুধ খাওয়াতে নিষেধ করা হয়। কারণ, সদ্যজাত শিশুর শরীরের চামড়া নরম ও পাতলা প্রকৃতির হওয়ায় মায়ের সংস্পর্শে ত্বকের মধ্য দিয়ে শিশুর রক্তে ভাইরাস প্রবেশের আশঙ্কা থাকে।
ক্রনিক কোলেস্ট্যাসিস-এর কারণে সৃষ্ট সিরোসিসে আক্রান্ত নারী এবং অটোইমিউন হেপাটাইটিস-এ আক্রান্ত নারী গর্ভবতী হতে পারেন। অটোইমিউন হেপাটাইটিস-এ আক্রান্ত নারী অ্যাজাথায়োপ্রিন ও প্রেডনিসোলোন ওষুধ পেতে থাকলে গর্ভাবস্থায়ও তা গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে মা ও গর্ভস্থ বাচ্চাকে নিয়মিত নিরীক্ষণে রাখতে হয়। সাধারণত গর্ভস্থ বাচ্চার কোন সমস্যা হয় না। এ অবস্থায় ভ্রুণ পূর্ণতা পেলে এবং বাচ্চার ডেলিভারী হলে, বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ দেয়া যাবে যদি মা উপরোক্ত ওষুধ দুটো গ্রহণ করে সুস্থ থাকেন।
উপসংহার
আমরা আলোচ্য প্রবন্ধে গর্ভবর্তী মায়েদের লিভারে কি কি সমস্যা হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা পেলাম। উপরোক্ত তথ্যের আলোকে এটা জানা গেল যে, আমাদের নিজেদের ও পরিচিতদের মধ্যে কোন গর্ভবতী নারী যদি জন্ডিসে আক্রান্ত হয় কালক্ষেপণ না করে তাকে লিভার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন করতে হবে। সুতরাং, আমরা নিজেরা সচেতন হব এবং পাশাপাশি আমাদের পরিচিত ব্যক্তিদেরও এই বিষয়ে অবহিত করবো। (শেষ)