World Diabetes Day

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন সচেতনতা এবং শৃঙ্খলা

Diabetes ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে পাঠ্য পুস্তকে সঠিক জীবননাচরণ সম্পর্কে তথ্য অন্তর্ভূক্তি, মিডিয়ায় গণ সচেতনতা, শিক্ষক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক নেতাদের প্রশিক্ষণ, সমাজ কর্মীদের সচেতন করে তোলা, সচেতনতা ক্যাম্প-ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বংশগত বিষয়টি যেহেতু এড়ানো সম্ভব নয়, তাই অন্য ঝুঁকিগুলো কমিয়ে ফেলতে হবে।

৩৫ বছরের পর থেকে বছরে অন্তত একবার রক্তের সুগার পরীক্ষা, ওজন হ্রাস, দৃর্বলতা, পিপাসা বৃদ্ধি বা ঘন ঘন প্রস্রাব ইত্যাদি কোনো লক্ষণ দেখা গেলে অবিলম্বে রক্তর সুগার পরীক্ষা করে নেওয়া, পরিবারে ডায়াবেটিরেস ইতহিস আছে এমন কেউ সন্তান ধারণের পরে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা, গর্ভধারণের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মেধ্য অবশ্যই সুগার পরীক্ষা করা ইত্যাদির মাধ্যমে ডায়াবেটিস সনাক্ত করা যায়।

রোগীদের নিজেরই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার দক্ষতা অর্জন করা দরকার। জীবন প্রণালির কাঙ্খিত পরিবর্তন, রোগের লক্ষণ ও ঝুঁকি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন, কখন কেন সুগার পরীক্ষা করা জরুরি, পরীক্ষার সহজলভ্যতা ও ব্যয় সংকোচন-এই বিষয়গুলো সবার জানা উচিত।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শৃঙ্খলা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল ভিত্তিই হলো সুশৃংখল জীবন যাপন। নিয়ম মাফিক খাওয়া দাওয়া করা, ঠিক মত হাঁটা চলা বা ব্যায়াম করা, ওষুধপত্র ব্যবহার ইত্যাদি যারা মেনে চলেন, তারা যেমন ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন, তেমনি আক্রান্ত হলেও সহজেই একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। ফলে স্বাভাবিক জীবন যাপন যেমন সম্ভব, তেমনি ডায়াবেটিস জনিত জটিলতা থেকেও বেঁচে থাকা সম্ভব। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা, তা দেখার জন্য মাঝে মধ্যে রক্তের সুগার টেস্ট (Sugar Test)করাতে হবে। স্বল্প দামের গ্লুকোমিটার (Glucometer)দিয়ে বাড়িতে বসে বসে সহজেই এ কাজটি করা যায়। অভূক্ত অবস্থায় রক্তের সুগারের পরিমাণ ৬ মিলিমোল এবং খাওয়ার পরে ৮ মিলিমোল-এর কাছাকাছি হলে ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করতে হবে। রক্তের এইচবিএ-১সি (HbA1C) মেপেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ধারণা করা যায়। এইচবিএ১সি ৭% নিচে হলে তিন মাস ধরে সুগার ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।

ডায়াবেটিস চিকিত্সা পদ্ধতি

ডায়াবেটিসের চিকিত্সার জন্য সংক্ষিপ্ত তিনটি “ডি” অনুসরণীয়। যেমন-

  • প্রথম “ডি”- ডায়েট বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ৬০ থেকে ৮০ ভাগ রোগী এতেই ভালো থাকেন।
  • দ্বিতীয় “ডি”- ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপন।
  • তৃতীয় “ডি”- ড্রাগ বা ওষুধ, খুব অল্প সংখ্যক রোগীরই এর প্রয়োজন পড়বে।

মনে রাখতে হবে, প্রথম ও দ্বিতীয় “ডি” অর্থ্যাত্ শৃঙ্খলা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই ডায়াবেটিসকে ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ওষুধধের ভূমিকা এখানে খুব কম। আবার প্রথম দুটি “ডি” বাদ দিয়ে শুধু ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ খুবই দুরূহ। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিত্সা একটি সমন্বিত সামাজিক পদক্ষেপ। সরকার, চিকিত্সক, কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারও একার পক্ষে কখনও এই বিপুল কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সমাজের প্রতি স্তরে ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলেই ডায়াবেটিসের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অনিরাময় যোগ্য রোগ হলেও একে নিয়ন্ত্রণে রেখেই সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবন যাপন করা যায়। তাই ডায়াবেটিসের মহামারী রোধে আজকের গ্লোগান হোক “পরিমিত খাবার ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করি” এবং একটি সুস্থ, কর্মোদ্যম ও প্রাণবন্ত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাই মিলে

এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন সচেতনতা এবং শৃঙ্খলা ( প্রথম পর্ব )

(শেষ)

অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ

অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ
অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ

লেখক:ডীন, মেডিসিন অনুষদ

অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়


Discover more from Health Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a ReplyCancel reply

error: Content is protected !!

Discover more from Health Bangla

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Exit mobile version