Pregnant

গর্ভাবস্থায় রক্ত কম ? কারণ ও প্রতিকার

যদি গর্ভাবস্থায় রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১০০ মিলিলিটারে ১০ গ্রাম থেকে কম থাকে অথবা রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম থাকে, তবে তাকে গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা বলে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের মহিলাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ। গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা একটি সাধারণ অথচ গুরুতর অসুখ। অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কারণে আমাদের দেশের মহিলারা সাধারণভাবে রক্তাল্পতায় ভোগেন। প্রাণিজ প্রটিনের অভাবই এর প্রধান কারণ। ডাল বা শাকসবজিতে যে পরিমাণ প্রটিন ও লোহা পাওয়া যায় তার অনেকটাই আমাদের রান্নার প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয়ে যায়।

 

Pregnant

গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে রোগজনিত কারণ এবং শরীরবৃত্তীয় কারণ অন্যতম। রোগের মধ্যে কৃমির সংক্রমণ (Hook warm), এবং অর্শ অন্যতম। বংশগত কারণ, যেমন সিকল সেল অ্যানিমিয়া, অথবা থ্যালাসেমিয়ার কারণেও রক্তাল্পতা হতে পারে।

শরীরবৃত্তীয় কারণেও রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় রক্তে প্লাজমার আয়তন মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার জন্য লোহিত রক্তকণিকা, হিমোগ্লোবিন ও হিমাটোক্রিটের মাত্রা কমে যায়। লোহা ঘাটতির কারণে রক্তের ওই মাত্রাগুলো কমে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় লোহা গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যা শরীরবৃত্তীয় কারণে সৃষ্ট রক্তাল্পতা দূর করতে পারে।

আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের মহিলাদের মধ্যে গর্ভাবস্থায় লোহার ঘাটতির কারণে রক্তাল্পতা খুব বেশি দেখা যায়। একজন মহিলার প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম লোহার প্রয়োজন। যেসব কারণে একজন মহিলার প্রাত্যাহিক লোহার ঘাটতি দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে খাদ্যাভ্যাসে ত্রুটি। অর্থাৎ খাদ্যে লোহার পরিমাণে ঘাটতি না থাকলেও বেশি পরিমাণ শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণের কারণে লোহার বিশোষণ কম হয়। তা ছাড়া পেটে ক্রিমি থাকার কারণেও লোহার বিশোষণ কমে যায়। অন্য দিকে শরীরের ঘামের সাথে প্রচুর লোহা বেরিয়ে যায়। মাসিকের সময় অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণের কারণেও প্রচুর লোহা বেরিয়ে যায়। ঘন ঘন গর্ভধারণ এবং অতিরিক্ত সময় ধরে শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময়ও শরীর থেকে প্রচুর লোহা বেরিয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় পুষ্টির অভাবেও রক্তাল্পতা দেখা যায়। রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এমন সব উপাদানের ঘাটতি, যেমন লোহা, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি-১২, কিছু খনিজ পদার্থ, হরমন ইত্যাদির অভাবেও রক্তাল্পতা দেখা দেয়।

Baby Delivery

সামান্য রক্তাল্পতায় অনেক সময়ই কোনো লক্ষণ থাকে না। তবে রক্তাল্পতা তীব্র হলে নানা উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন ক্ষুধামন্দা, ঘন ঘন পাতলা পায়খানা, অল্প পরিশ্রমেরই শ্বাসকষ্ট ও বুক ধড়ফড় করা, বুকে ব্যথা, মাথা ধরা, মাথা ঘোরা, পা জ্বালা করা, জ্বর, কাজে অনিচ্ছা, যৌন মিলনে অনীহা, ফ্যাকাশো ও বিবর্ণ চেহারা, চুলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হওয়া। এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে পরীক্ষা করলে চামড়া ফ্যাকাশে দেখা যাবে। জিব, ঠোঁট, নষ্ট এবং আঙুলের মাথাও ফ্যাকাশে দেখায়। চোখ-মুখ ফোলাভাব, ভিজে ঘা, হৃৎপিণ্ড বড় হওয়া, লিভার বড় হওয়া ইত্যাদি। এমনকি অনেক সময় হার্ট ফেলিওর হতে পারে।

গর্ভাবস্থার প্রথম থেকেই ভাবী মায়ের সুষম খাদ্যের প্রয়োজন, যেমনটাটকা শাকসবজি, ফল, মাছ, গোশত, ডাল ইত্যাদি।

এখানে রক্তাল্পতার একটি হিসাব আমরা জেনে নিতে পারি। যেমন, অল্প রক্তাল্পতা মানে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যখন ৮.১ গ্রাম % থেকে বেশি ও ১০ গ্রাম % থেকে কম থাকে। মাঝারি রক্তাল্পতা হচ্ছে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৫.১ গ্রাম % থেকে বেশি এবং ৮ গ্রাম % থেকে কম থাকে। আর তীব্র রক্তাল্পতা হলো, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৫ গ্রাম % বা তার থেকে কম।

রক্তাল্পতা জানার জন্য যেসব পরীক্ষা প্রয়োজন, যেমনমল পরীক্ষা, বিশেষ করে হুকওয়ার্ম সংক্রমণ আছে কি না, তা দেখার জন্য। মূত্র পরীক্ষামূত্রে প্রটিন, শর্করা, পুঁজ কোষ আছে কি না, তা দেখার জন্য। মূত্র কালচার প্রয়োজন হয় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আছে কি না, তা দেখার জন্য। বুকের এক্স-রে করে দেখতে হয়, ফুসফুসে কোনো সংক্রমণ আছে কি না।

গর্ভাবস্থায় রক্ত কম

রক্তাল্পতা থাকলে ভাবী মায়ের নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যদি পুষ্টিজনিত রক্তাল্পতা থাকে, তবে মায়ের প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে এবং প্রসাবের পরে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। রক্তাল্পতার কারণে প্রি-একলামশিয়া হতে পারে। সময়ের আগেই প্রসব হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় ৩০-৩২ সপ্তাহে হার্ট ফেলিওর হতে পারে। প্রসবকালীন অতি রক্তক্ষণের আশঙ্কা থাকে। প্রসবকালীন জরায়ুর সঙ্কোচন ঠিকমতো নাও হতে পারে। প্রসবকালীন হার্ট ফেলিওর হতে পারে। প্রসবকালীন মূর্ছার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া রক্তাল্পতার কারণে প্রসবপরবর্তী নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমনপ্রসবের পর সংক্রমণ, জরায়ুর সঠিক সঙ্কোচন না হওয়া, বুকে দুধ না আসা, শিরায় রক্ত জমে যাওয়া, পালমোনারি এম্বলিজম। গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতার কারণে অনেক সময় রোগী (গর্ভাবস্থার ৩০-৩২ সপ্তাহে) মারা যেতে পারে। প্রসবের ৭-১০ দিনের মধ্যেও মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতার কারণে অকালে শিশুর জন্ম হতে পারে। কম ওজনের শিশু হতে পারে। রক্তাল্পতার কারণে শিশুর রোগগ্রস্ততা এবং মৃত্যুর হার বেশি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা প্রতিরোধে রোগীর আর্থসামাজিক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে সুষম খাবার খেতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

নিরাপদ মাতৃত্ব – ডা: আবু আহনাফ


Discover more from Health Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *